জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা রাজনীতিতে মাত্র নাম লিখিয়েই ১০ গাড়ি নিয়ে প্রচার চালায় তারা ভবিষ্যতে দেশের কী করবে সেটা আমরা বুঝি।
মঙ্গলবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, “যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন (নির্বাচনি প্রচারাভিযান) করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।”
সোমবার ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর যান এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সৈয়দপুর থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিসের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে সারজিস আলমের এই ‘শোডাউন’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি ওই আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন,
মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাতে দিয়েই হয়েছে। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ২০১৬ সালে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন দিয়েছেন। সংস্কার কোনো নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বতী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে - বিপক্ষে।”
“আমরা বলেছি, নির্বাচনের বিকল্প নেই। এটি নিয়ে আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু কুতুবের আবির্ভাব হয়েছে। তারা যে বাংলাদেশকে কোথায় নিতে চায় আমাদের জানা নেই। দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। আমরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।"
‘জনগণ যাতে বিএনপিকে ভালো বলে, এমন কাজ করতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি।”
এ কথা বলছি এ কারণে, একটি গোষ্ঠী এই বিষয় আমলে নিচ্ছে না। তারা বলছে, ৭১ কোনো ঘটনা না। তারা বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের নাম বলতে চাই না। এখন তারা আবার গলা ফুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। ইতিহাস তো ইতিহাস। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
ফখরুল বলেন, “রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মানুষকে অরক্ষিত রেখে কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ২০২৪ সালের আগস্টেও তারা তাদের নেতাকর্মীদের রেখে হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে গেছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। এটাই এদের চরিত্র। ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার ক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে।”
১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বাকশালের ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমাদেরকে বারবার বলতে হবে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করতো না। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং, আওয়ামী লীগকে আর কোনো গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না।”
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “জনগণের আকাঙ্ক্ষিত ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে, উছিলা সামনে আনার চেষ্টা করেছে। জনগণ সন্দেহ পোষন করছে, আমরা কিন্তু বুঝি। কেউ বলছে, সংস্কার আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এগুলো বলে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্ব করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশ নির্বাচনমুখী হলে যত ষড়যন্ত্র আসুক না কেন, জনগণ তা মোকাবিলা করবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা হীন চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, বিএনপিকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে।”
আলোচনা সভায় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : মির্জা ফখরুল এনসিপি ইঙ্গিত ১০ গাড়ি প্রচার
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh