ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ঘৃণ্য এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে যেখানেই পাবেন সেখানেই গ্রেফতার করবেন।
সোমবার সিলেট, কক্সবাজার, খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুরে কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটা, ইউনিমার্টসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয়কেন্দ্রে হামলার পর রাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই কথা জানানো হয়।
এতে লেখা হয়, “সিলেট ও দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান-ব্যবসা ভাঙচুরের দায়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ।”
আইজিপি বলেছেন, তাদের কাছে হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ আছে। তাদেরকে শনাক্ত করা হচ্ছে এবং অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ এ নিয়ে কাজ করছে।
এদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশ উত্তাল ছিল ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত হয়ে উঠা ‘তৌহিদী জনতা’ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কথিত ইসরায়েলি পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা শুরু করে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের আশা দেখে যখন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, সে সময় এসব ঘটনার সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় একটি মিছিল থেকে কেএফসি, পিৎজা হাটসহ অন্তত ১০টি দোকানের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। পানসী রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের সময় একজন পর্যটকও আহত হন।
‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল থেকে সিলেটের কেএফসি, ইউনিমার্ট, বাটা, ডমিনোজ পিৎজার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনাগুলো ঘটে। পরে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় শোরুম ও দোকানপাটে ভেতর থাকা ক্রেতা ও কর্মচারীদের বের করে নিয়ে আসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বরিশালে কেএফসির শাখার সামনে সড়কে নামাজ শেষে প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা হয়। সেখানে সেনা সদস্যরা মোতায়েন থাকার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর ও খুলনাতেও একই রকম ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে দেখা গেছে, বাটার বেশ কিছু বিক্রয়কেন্দ্র থেকে লুটপাট করে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। অন্য একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ভেতরে লুটপাটকারীরা অবস্থান করার সময় সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসে। তখন লুটপাটকারীরা পড়িমরি করে ছোটাছুটি করতে থাকে।
এই তৌহিদী জনতা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলি মালিকানার দাবি করছে। তারা কোকাকোলা, স্প্রাইটসহ বিভিন্ন কোম্পানির কোমলপানীয় লুট করে সেগুলো রাস্তায় ঢেলে নষ্ট করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পাতায় আইজিপির বরাত দিয়ে লেখা হয়, “সরকার কোনো ন্যায়সঙ্গত বিক্ষোভে বাধা দেয় না। তবে, প্রতিবাদ কর্মসূচির আড়ালে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।”
ঢাকায় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরুর দিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা ‘ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, “যখন আমরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছি, তখন এ ধরনের ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
এসব ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, “এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকেই স্থানীয় বিনিয়োগকারী ও কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন যারা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখতেন। তারা সবাই আমাদের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।” “যারা এই জঘন্য ভাঙচুর চালিয়েছে তারা দেশের কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বিরোধী”, বলেও আখ্যা দেন বিডা প্রধান।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh