হাসিনাকে ফেরত প্রসঙ্গে মোদীর প্রতিক্রিয়া কী? তৌহিদ বললেন, ‘চূড়ান্ত কিছু নয়’

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

এ বিষয়ে সংবাদকর্মীরা একাধিকবার প্রশ্ন করলেও তিনি বারবার এড়িয়ে গেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন ও ব্যাংকক সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে আসেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “দুটো সফরই আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। চীনে কিছু কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।”

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী বৈঠকে কী বলেছেন, এই প্রশ্নে তৌহিদ বলেন, “বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি, আমি এটুকুই বলব।”

জবাবটা ইতিবাচক ছিল কি না— পাল্টা প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো কথাবার্তা হয়নি, কাজেই আমরা এটাকে এখানেই রাখি। আমরা তো তাদের কাছে ফেরত চেয়েছি, বলেছি তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।”

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চীন যান গত ২৬ মার্চ। তিনদিন পর দেশে ফেরেন তিনি।

এই সফরের আগে সরকারের তরফে বেশ উচ্চাশার কথা বলা হচ্ছিল, চীনা বিনিয়োগ, চীনের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বলে জানানো হয়েছিল।

ইউনূস চীন সফরে যাওয়ার সময় তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর দিল্লিতে করতে চেয়েছিলেন, তবে ভারত সাড়া দেয়নি।

অবশ্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সরকারের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি হয় ইউনূসের চীন সফরের পরপর থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে।

সেই বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না বলে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শফিকুল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, “যখন অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেন, তখন নরেন্দ্র মোদীর প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না।”

তিনি আরও লেখেন, “আমরা আশাবাদী, একদিন শেখ হাসিনা ঢাকায় প্রত্যর্পিত হবেন এবং আমরা শতাব্দীর বিচার দেখতে পারব!!”

এএনআইয়ের প্রতিবেদনে লেখা হয়, “সূত্রগুলো জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত যেই মন্তব্যটি প্রেস সেক্রেটারি করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই।”

সেই প্রতিবেদনে বরং সূত্রের বরাত দিয়ে লেখা হয়, “এমন প্রচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।”

অস্বস্তিকর বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ দুপক্ষকেই পরিহার করতে হবে

পররাষ্ট্র সচিব ইউনূস-মোদীর বৈঠককে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয় এমন বক্তব্য না দিতে ভারত যে মন্তব্য করেছে, সে বিষয়েও কথা বলেন।

তৌহিদ বলেন, “অস্বস্তিকর বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ দুপক্ষকেই পরিহার করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা নিজেরাও একমত।”

মন্তব্য ‘একতরফা’ হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একই কাজ ভারত থেকেও হয়ে থাকে। আমরা জানি যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিদিনই শক্ত শক্ত কথা শোনা যাচ্ছে, এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ কেউ এটা করেছেন। আমরা এটা বলেছি, সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গেলে আপত্তিকর কথাবার্তা না বলাই ভালো। আমরা এটাকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি।”

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দেওয়ার যে বক্তব্য এসেছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন নিয়ে যে কোনো জায়গায় কথাবার্তা হলে তারা এমন বলেন। এই সরকার তো নিজে থেকে বলেছে, যথা শিগগির সম্ভব দায়িত্ব শেষ করে নির্বাচন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেওয়া এই সরকারের অঙ্গীকার।

“এটা যদি অন্য কেউ বলেন, এ কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয় এবং যেসব দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই তারাও জানতে চান।”

এক ধরনের স্থিতিশীলতা বা অনুমাননির্ভরতা থেকে এটা জানতে চাইতে পারেন মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “কারণ, বিনিয়োগের প্রশ্ন আছে। তারা জানতে চাইতে পারেন কী রকম পরিস্থিতি হবে বা কখন নতুন সরকার আসবে। এটা তাদের নিজেদের স্বার্থে তারা জানতে চাইতে পারেন।”

দুই পক্ষই আসলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো রাখার এবং ভালো করার ওপর জোর দিয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মোদী স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে; এটা কোনো দলের সঙ্গে নয়। এটাকে আমরা একটা ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখতে চাই।”

ভারতীয় ভিসা নিয়ে সরকার কী করছে

ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে- এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আছে কি না- প্রশ্ন ছিল এক সংবাদকর্মীর। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “ভিসা দেওয়াটা তাদের বিষয়। আমরাও সাময়িকভাবে সেই দেশে ভিসা বন্ধ করেছিলাম। তবে কোনো দেশের ভিসা বন্ধ হলে শূন্যতা থাকে না। মানুষ অন্য দেশে সমাধান খুঁজে নেয়।”

ইতালির ভিসা পেতে বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করছেন- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তৌহিদ বলেন, “ইতালির ভিসা নিয়ে দেশটির সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা করছি। তবে ভিসা পেতে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

“ইতালির ভিসার জন্য অনেক অবৈধ কাগজপত্র দেওয়া হয়। তারা (ইতালি) দেখছে, আসলেই সেই কাগজপত্র ঠিক আছে কি না। অনেক লোকজনের কাগজপত্র জেনুইন আছে, তারাও এখন এই অবস্থায় ভিসার জন্য ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।”

তিস্তায় চীনও থাকতে পারে, ভারতও পারে

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে তিস্তা প্রকল্প উঠে এসেছিল বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্পটি ভারতকে যুক্ত করে করার সিদ্ধান্ত নিলেও অন্তর্বর্তী সরকার এতে চীনকে যুক্ত করার পক্ষে।

চীনের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে বলেন, “অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা ঝুট করে কোনো কিছু প্রত্যাশা করছি না যে কালকেই কেউ তিস্তা সমস্যার সমাধান করে দেবে।

“চীনের সঙ্গে আমাদের একটি আমব্রেলা চুক্তি আছে নদীর পানি নিয়ে। নদীর পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার জন্য এবং আমাদের জন্য বিশেষ করে।”

তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে চীন ও ভারত-দুই দেশের সঙ্গে আলোচনায় কোনটার অগ্রগতি বেশি- এই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার খোলামেলা অবস্থানে। এক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও সহযোগিতা সম্ভব। কোনোটাতে কোনো বাধা নেই।

“অগ্রগতি সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা ঝট করে কোনোকিছু প্রত্যাশা করছি না, যেমন কালকে কেউ এসে তিস্তার সমস্যার সমাধান করে দেবে। …আমরা দেখব যে, কোনদিকে কোন প্রকল্পে সহায়তা নিলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। সুবিধা অনুযায়ী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের কার্যকলাপ করবে।”

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh