ফিনসেন নথি ফাঁস

কালোটাকা পাচারে দেশসেরা ব্যাংকের তালিকা

ফিনসেন নথিতে কালো টাকা পাচারে জড়িতের তালিকায় উঠে এসেছে দেশের শীর্ষ তিন ব্যাংকের নাম। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আটটি ‘ট্রানজেকশনে’ সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার লেনদেন ওই তিন ব্যাংকের মাধ্যমে, বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার বেশি।

এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল) বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বার্কলেইস-সহ শীর্ষ সব ব্যাংকই জড়িত কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের এ প্রবাহে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অনেক রুশ ধনকুবেরই অর্থ স্থানান্তর করতে পেরেছেন এর মাধ্যমে।  

যুক্তরাষ্ট্রের ফিনানশিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সন্দেহজন লেনদেনের প্রায় আড়াই হাজার দলিল রবিবার প্রকাশ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে), যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’

ফাঁস হওয়ে যাওয়া নথিপত্রের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী অপরাধী চক্রের দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থপাচারে সহায়তা করেছে বৃহৎ ব্যাংকিং সংস্থাগুলো।  এরই মধ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এবং বাংলাদেশে আসা আটটি লেনদেনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই লেনদেনগুলো হয়েছিলো ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে, যার পরিমাণ আট লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার৷ টাকার অঙ্কে যা সাত কোটির বেশি৷  

মূল রিপোর্ট পড়তে ক্লিক করুন

এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড, বার্কলেইস-সহ শীর্ষ সব ব্যাংকই জড়িত কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের এ প্রবাহে। এছাড়াও, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অনেক রুশ ধনকুবেরই অর্থ স্থানান্তর করতে পেরেছেন এর মাধ্যমে।  

গত পাঁচ বছর ধরে হওয়া ফাঁস হতে থাকা গোপন অর্থনৈতিক নথির সাম্প্রতিক কিস্তিটাই তুলে ধরেছে- ফিনসেন ফাইলস। যা প্রচলিত এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকিং জায়ান্টদের কালো টাকা পাচার এবং আর্থিক অপরাধের সুবিশাল গোপন জগত উন্মোচন করছে। 

ফিনসেন নথি আসলে কী?
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আর্থিক খাতের উপর একচ্ছত্র আধিপত্য আছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ শীর্ষ ব্যাংকগুলো যেসব লেনদেনের দলিল পাঠায়-তারমধ্যেই আড়াই হাজার নথি ফাঁস করেছে- সাম্প্রতিকতম ফিনসেন ফাইলস। লেনদেনে জড়িত গ্রাহকদের পরিচয় বা আয়ের উৎস সম্পর্কে ব্যাংকগুলোর উদাসীনতা উঠে এসেছে এর মাধ্যমে।  

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এমন দলিলাদি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষা করা হয়। ফাঁস না হলে; এদের অস্তিত্ব ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাধারণ জনতার জানার সুযোগ ছিল না। 

প্রায়শই অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন বা সন্দেহভাজন গ্রাহকদের সম্পর্কে (সার্স) রিপোর্ট প্রকাশ করে ব্যাংকগুলো। ফিনসেন নথি তারই অংশ। অবশ্য তার মানে এই নয় যে; তারা এসব গ্রাহকদের সঙ্গে অসৎ লেনদেন বা অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িত নয়।  

বাজফিড নিউজ-সহ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি অন্যতম বৈশ্বিক গ্রুপের কাছে এসব নথি ফাঁস করে দেওয়া হয়। এটি তারা বিশ্বের ৮৮টি দেশের ১০৮টি বার্তা সংস্থার কাছে তুলে ধরেছেন। এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক খাতে।  

পৃথিবীর শত শত মেধাবী অর্থনৈতিক সাংবাদিক জটিল, তথ্যবহুল এ নথি বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন তথ্য উন্মোচন করছেন। তুলে ধরছেন এমন কিছু লেনদেনের ঘটনা; যা জনসাধারণ জানুক, এমনটা চায় না ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। 

বিভিন্ন ব্যাংক ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ফিনসেনকে এসব লেনদেনের তথ্য পাঠিয়েছিল। এসব লেনদেনে দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ব্যাংকগুলো ফিনসেনকে জানিয়েছে।

কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো গোপন প্রতিবেদন আকারে ফিনসেনকে তা জানায়, যাকে বলে ‘সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস'। এর সবক্ষেত্রেই যে অর্থপাচার বা বেআইনি কিছু ঘটেছে, তা প্রমাণিত নয়।

বাজফিড নিউজ এসব গোপন দলিল হাতে পাওয়ার পর তা তারা আইসিআইজেকে দেয়। এরপর ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদমাধ্যমকে এসব নথি দেওয়া হয়, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে।

আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেনের যে আটটি ঘটনার তথ্য এসেছে, সেসব লেনদেনে আন্তর্জাতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মেলন করপোরেশন। তারাই ওই আট লেনদেন নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ফিনসেনকে জানিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক: অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং (এএনজেড) থেকে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর তিন ট্রানজেকশনে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলার আসে।

এসআইবিএল: লাটভিয়ার রিজিওনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের সোশাল ইসলামী ব্যাংকে আসে ১ হাজার ৬০০ ডলার।

ফিনসেন এবং সার্স- দুটি সংক্ষিপ্ত শব্দের অর্থ জানা জরুরি 

ফিনসেন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের 'ফাইনান্সিয়াল ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক'(FinCEN) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এরা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে আর্থিক অপরাধ দমনে কাজ করে । মার্কিন ডলারে যত লেনদেন হয়, সেটা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ঘটে থাকে, সেই লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা ফিনসেনের কাছে পাঠাতে হয়।

ফাঁস হওয়া সার্স নথির নমুনা। ছবি: বিবিসি

সার্স হচ্ছে ইংরেজিতে 'সাসপিসিয়াস এক্টিভিটি রিপোর্টস' এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এরকম সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়গুলো এই সার্সের মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখা হয়। কোন ব্যাংকের যদি তাদের কোন গ্রাহকের লেনদেন নিয়ে সন্দেহ জাগে, তখন এই সার্স রিপোর্ট লিখে তাদের পাঠাতে হয় মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে।

ফিনসেন ফাইলস গুরুত্বপূর্ণ কেন? 
দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে মুনাফা উপার্জনের পরিকল্পনা করলে, প্রথমেই আপনাকে সেই অর্থ পাচারের জন্য একটি কার্যকর উপায় ভেবে রাখতে হবে। এই অর্থপাচারের প্রক্রিয়াকেই বলা হচ্ছে ব্যাংকের কালো টাকা গ্রহণ করে সাদা করার প্রক্তিয়া। যেমন এর মাধ্যমে, যেমন, মাদক চোরাচালান বা দুর্নীতির মাধ্যমে পাওয়া অর্থ কোন একটা ব্যাংকের একাউন্টে এমনভাবে জমা করা, যাতে করে আগের অপরাধের সঙ্গে এই অর্থের কোন যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া না যায়।

একইভাবে আপনি যদি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো রুশ ধনকুবের বা প্রভাবশালী হন; তাহলে আপনি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েই এ প্রক্রিয়ায় নিজ সম্পদ পশ্চিমা দেশ বা বিশ্বের যেকোনো স্থানে পাচার করতে পারবেন। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান বিভাগ এধরনের সন্দেহজনক তৎপড়তা সম্পর্কে জানে। 

শুধু রুশ ধনীরা নন, মেক্সিকো'র মাদক ব্যবসায়ী, নানা দেশের আদম পাচারকারী চক্র বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই বিশ্বজুড়ে এভাবে তাদের অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে পারছে।  

নিয়ম ভেঙ্গে কোন গ্রাহক যেন এভাবে অর্থ পাচার করতে না পারে, বা কালো অর্থ সাদা করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা ব্যাংকগুলোর কাজ। কিন্তু, সার্স প্রতিবেদন করলেও তারা আদতে এবিষয়ে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেই দেখা যাচ্ছে। 

প্রশ্ন উঠেছে; পশ্চিমা বিশ্বের আর্থিকখাতের স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। তাদের অপরাধে জড়িত থাকার মাত্রা নিয়ে। কারণ, ফিনসেন সংস্থার কাছে সার্স প্রতিবেদন পাঠালেই ব্যাংকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাটা তাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। 

ইন্টারন্যাশলান কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) - এর সদস্য ফার্গুস শিয়েল বলেন, ফাঁস হওয়া নথি 'বিপুল পরিমাণ কালো টাকা পাচারের বিষয়ে যে ব্যাংকগুলো যে ভালো করেই জানে, তা তুলে ধরছে।''  

তিনি জানান, নথির বরাতে বিস্ময়কর পরিমাণ অর্থ লেনদেন আমাদের নজরে এসেছে। যেটুকু ফিনসেন দলিল পাওয়া গেছে, শুধুমাত্র তাতেই দেখা গেছে দুই লাখ কোটি ডলারের অবৈধ অর্থের লেনদেন। এসময়ে যে পরিমাণ সার্স প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়, এটা তার সামান্যতম অংশ (শূন্য দশমিক দুই ভাগ) বলেও তিনি উল্লেখ করেন।  

আছে বাংলাদেশের সন্দেহজনক আট লেনদেন: 
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এবং বাংলাদেশে আসা আটটি লেনদেনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই লেনদেনগুলো হয়েছিল ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে, যার পরিমাণ আট লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার৷ টাকার অঙ্কে যা সাত কোটির বেশি৷  

এরমধ্যে অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে এসেছে তিন লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৩ ডলার, যার তিন লাখ ৩৬ হাজার ১৩৩ ডলারই ঢুকেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে৷ অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং (এএনজেড) থেকে এই টাকা এসেছে৷ টাকা স্থানান্তর হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট থেকে এক সেপ্টেম্বরে৷ 

লেনদেনগুলো সম্পন্ন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মেলন কর্পোরেশনের মাধ্যমে৷ তারাই এই লেনদেনের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অর্থ পাচার প্রতিরোধ বিভাগকে অবহিত করে৷ 

এছাড়াও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের ১৬০০ ডলারের আরেকটি লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড৷ ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল লাটভিয়ার একটি ব্যাংক থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড হয়ে ওই টাকা সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকে এসেছিল৷

অন্যদিকে চারটি পৃথক ট্রানজেকশন বা লেনদেনে বাংলাদেশের রুপালি ব্যাংক থেকে জার্মানির ডয়চে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে চার লাখ ৯৫ হাজার ডলার স্থানান্তর হয়েছিল৷ এই লেনদেনটি হয়েছে ২০১৬ সালের ১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর৷ এই সম্পর্কেও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের কাছে রিপোর্ট করেছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড৷

ফাঁস হওয়া নথির প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং জায়ান্টদের ব্যবসায়: 
নথি ফাঁসের পর গত সোমবার নাগাদ কার্যদিবসের প্রথমভাগের লেনদেনে লন্ডন পুজিবাজারে বার্কলেইস ব্যাংকিং সংস্থার বাজারমূল্যায়ন ৪ শতাংশ পতন লক্ষ্য করে। একই অবস্থা দেখা গেছে, এইচএসবিসি এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের শেয়ারে। এর আগে হংকং পুঁজিবাজারেও ৪ শতাংশের বড় দরপতনের শিকার হয় এইচএসবিসি। ১৯৯৫ সালের পর প্রথম এতবড় দরপতন হয়েছে ব্যাংকটির। 

লন্ডন বিশ্বের ব্যাংকিং সেবা ব্যবস্থার এক বড় কেন্দ্র। ছবি: বিবিসি

ইতোমধ্যেই, ইউরোপের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি চীনে 'অবিশ্বস্ত সংস্থার' তালিকায় স্থান পেতে পারে- এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে ফিনসেন নথি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ইতোপূর্বে, গত শনিবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এইচএসবিসি'কে রাখার আভাস দিয়েছিল চীনা সমাজতান্ত্রিক সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস। এসব কিছুরই প্রভাব পড়েছে এইচএসবিসি'র সাম্প্রতিক বাজার মূল্যায়নে।

ফাঁস হওয়া দলিল থেকে যা জানা গেছে:
এইচএসবিসি জালিয়াত চক্রকে চুরি করা কোটি কোটি ডলার পাচার করতে দিয়েছে। মার্কিন তদন্তকারীদের কাছ থেকে এই স্কিমটি যে একটি ধাপ্পাবাজি সেটা জানার পরও তারা এই লেনদেন হতে দিয়েছে।

জেপি মর্গান একটি কোম্পানিকে লন্ডনের একটি একাউন্ট ব্যবহার করে একশো কোটি ডলার লেনদেন করতে দিয়েছে। অথচ জেপি মর্গান জানতোই না কোম্পানিটির মালিক কে। পরে জেপি মর্গান জানতে পারে যে এই কোম্পানিটির মালিক হয়তো এমন এক অপরাধী গোষ্ঠির নেতা, যার নাম আছে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দশ ফেরারি আসামীর তালিকায়।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী তার বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে লন্ডনের বার্কলেজ ব্যাংককে ব্যবহার করেছেন। অথচ এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্যই ছিল তিনি যেন পশ্চিমা বিশ্বের কোন আর্থিক সেবা ব্যবহার করতে না পারেন। এই পাচার করা অর্থ দিয়ে শিল্পকর্ম কেনা হয়েছে।

ফিনসেনের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের মতে, যুক্তরাজ্য এখন সাইপ্রাসের মতোই "উচ্চ ঝুঁকির এলাকা।" যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত যে পরিমাণ কোম্পানির নাম সার্স রিপোর্টে এসেছে, সেই কারণেই এটা হয়েছে। ফিনসেন ফাইলে যুক্তরাজ্যের তিন হাজারের বেশি কোম্পানির নাম আছে। বিশ্বের আর কোন দেশের এত বেশি কোম্পানির নাম ফিনসেন ফাইলে নেই।

ইরানের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, সেটি এড়াতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি কোম্পানি সহায়তা করছিল। কিন্তু এনিয়ে সতর্ক করে দেয়ার পরও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়।সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক চোরাচালানকারীদের কালো টাকা পাচার করতে দিয়েছে ডয়েচে বাংক।

জর্ডানের একটি ব্যাংক 'আরব ব্যাংকে‌র' গ্রাহকের একাউন্ট এক দশকের বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদের অর্থ যোগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক তাদের অর্থ লেনদেন করতে দিয়েছে। বিবিসি, ডয়েচে ভেলে, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //