বাংলাদেশের ঋণমান

আউটলুক নেতিবাচক ক্যাটাগরিতে রেখেছে এসঅ্যান্ডপি

বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান অপরিবর্তিত রেখে ভবিষ্যতের জন্য আভাস বা আউটলুক ‘নেতিবাচক’ ক্যাটাগরিতে নামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি। দীর্ঘ সময় ধরে যা ‘স্থিতিশীল’ ছিল। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বিদ্যমান চাপ বিবেচনায় এসঅ্যান্ডপি এই পরিবর্তন এনেছে।

এর মাধ্যমে আগামীতে বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বাংলাদেশের এ সংস্থা বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি রেটিং’ প্রকাশ করে। সম্প্রতি আরেক আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি জানিয়েছে, আগামী ১২ মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। এমন ঝুঁকি প্রতিফলিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি আউটলুক ‘নেতিবাচক’ দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও চলতি হিসাব পরিস্থিতির উন্নতি হলে আউটলুক সংশোধন করে আবার ‘স্থিতিশীল’ করা হবে। এ ছাড়া দেশের ঋণমান দীর্ঘ মেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ এবং স্বল্প মেয়াদে ‘বি’ সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত মে মাসে আরেক ঋণমান সংস্থা মুডিস দেশের ঋণমান কমায়। ঋণমান কমানোর কারণ হিসেবে ডলার সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেটিং ‘বিএ৩’ থেকে কমিয়ে ‘বি১’ নির্ধারণ করে। তবে আউটলুক বা ভবিষ্যতের জন্য আভাস ‘স্থিতিশীল’ অপরিবর্তিত রাখে।

এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী এক বছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে আগামীতে রেটিং নিম্নমান হবে। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি উন্নত করতে বাণিজ্য ও অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। তারা মনে করে, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হবে। এবার সরকার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অবশ্য ২০২৪ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে।

গত জুনে মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ঋণমান কমানোর পেছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেননা ২০১২ সাল থেকে মুডিস রেটিং করে আসছে। তখনকার চেয়ে এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাঝে রিজার্ভ অনেক বেড়েছিল। অথচ ঋণমানের কোনো পরিবর্তন করেনি।

ঋণমান হলো কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা। ঋণমানের মূল্যায়ন থেকে কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একটি দেশের রেটিং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। ঋণমান কমলে স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ঝুঁকি বিবেচনায় বিদেশি ঋণ পাওয়া তুলনামূলক কঠিন হয়ে যায়। সুদহার ও অন্যান্য খরচ অনেক বেড়ে যায়।

আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম৬ ম্যানুয়াল) অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন যে পদ্ধতিতে হিসাব করে আসছে, সে আলোকে রিজার্ভ রয়েছে ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমাতে গত অর্থবছর ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে।   


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //