সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেতিবাচক: কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকরা। মেয়াদপূর্তির পর যে হারে সঞ্চয়পত্র ভাঙছে, সেই হারে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমে ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধিতে নেমেছে। সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৩ কোটি ৬৪ টাকা। এরপর পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বলতে বোঝানো হয়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও ভাঙানোর মধ্যকার ব্যবধান। গত অর্থবছরে যে পরিমাণ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছিলো, ভাঙানোর পরিমাণ ছিলো তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ছিলো নেতিবাচক। তবে এই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে। এসময় মূল ও মুনাফা পরিশোধ করেও এই খাতে সরকারের ঋণ রয়েছে।

সুদ ব্যয় কমাতে সঞ্চয়পত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছিলো সরকার। এর ফলে খাতটিতে বিনিয়োগ নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। এছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকার সঞ্চয়পত্রের নির্ভরতাও কমিয়ে ফেলেছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি ২ লাখ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছিল সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে।

বিনিয়োগ কমার আরও কারণ রয়েছে। যেমন পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ব্যাংক হিসাবে জমা টাকা ১০ লাখ অতিক্রম করলেও দিতে হয় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পান। কিন্তু এই বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ। জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নেওয়ার বিপরীতে সরকারকে উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //