‘একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরন কেশ’-নারীর চুল নিয়ে যেন গান, কবিতা, উপমার শেষ নেই। কিন্তু কন্যার যে সব সময় মেঘবরন কালো চুলই থাকবে এমন কোনো কথা নেই। তাই মনের মতো চুলের রঙ বেছে নিতে পারেন। তবে কালার করার আগের এবং পরে অবশ্যই বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কেমন রঙ বাছবেন, রঙ দীর্ঘস্থায়ী করতে কী কী যত্ন নেবেন, এমন কিছু টিপস রইল...
রঙ করার আগে
চুল রঙ করার মানেই নানা ধরনের কেমিক্যালের ব্যবহার। তাই সঠিক যত্ন না নিলে, চুলের বারোটা বাজা অবশ্যম্ভাবী। কালার করার পর চুলের যেসব ক্ষতি হতে পারে, তার জন্য আগে থেকেই যত্ন নিতে হবে। এতে কালার দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং চুলও ভালো থাকবে। চুলের আর্দ্রতা যেন সঠিক থাকে। চুল কালার করার অন্তত দুই মাস আগে থেকে নিয়মিত চুলে তেল লাগান এবং সপ্তাহে একবার নারিশিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এই সময় হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। যদি চুলে ব্লিচ করানোর দরকার পড়ে, সে ক্ষেত্রে আগের দিন রাতে চুলে কোল্ড-প্রেসড নারকেল তেল লাগান। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে।
রঙ করার পর
চুলের আসল যত্ন শুরু হয় রঙ করার পর। রঙ দীর্ঘস্থায়ী করতে বিশেষ কিছু যত্ন একান্ত প্রয়োজন। যত্নের পাশাপাশি কিছু সাবধানতাও মেনে চলা আবশ্যক।
চুল রঙ করার পর অন্তত দুদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। এতে চুলে রঙ সেট হওয়ারও পর্যাপ্ত সময় পাবে। শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে অবশ্যই চুলে তেল লাগাবেন। এতে চুলের গায়ে একটি আস্তরণ পড়বে এবং রঙ উঠে আসবে না।
চুল রঙ করলে কিছু ক্ষতি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। তবে চুল ট্রিম করালে সেই ক্ষতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অন্তত কমবে। বিশেষত যদি চুলের রঙ হালকা করেন অর্থাৎ ব্লন্ড বা গোল্ডেন শেড বাছেন, সে ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা চুল কাটতে হতে পারে।
সদ্য রঙ করা চুল খুব অল্পেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রঙ যাতে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং চুলও ভালো থাকে, সে জন্য ভালো ব্র্যান্ডের কালার প্রোটেক্টিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এগুলো চুল পরিষ্কার করার পাশাপাশি চুলের ওপর এক ধরনের আস্তরণ তৈরি করে যা রঙ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
ঘন ঘন শ্যাম্পু করা যাবে না। যদি সপ্তাহে ৩-৪ বার শ্যাম্পু করার অভ্যাস থাকে, তাহলে তা কমিয়ে ২-৩ বার করুন। এতে চুলের রঙ ভালো থাকবে, পাশাপাশি চুলের প্রাকৃতিক তৈলাক্তভাব বজায় থাকবে এবং চুলও পুষ্টি পাবে।
গরম পানিতে চুল ধোওয়া যাবে না। গরম পানিতে চুলের কিউটিকল উন্মুক্ত হয়। ফলে চুলের আর্দ্রতা কমে যায় এবং চুল রুক্ষ এবং নির্জীব হয়ে পড়ে। এতে চুলের ক্ষতির আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায়।
যদি ঘন ঘন চুল ধোওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সে ক্ষেত্রে ড্রাই শ্যাম্পু বাছতে পারেন। এতে চুল ধোওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে রঙও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
রঙ-করা চুলের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ সমস্যা হলো রুক্ষতা ও শুষ্কতা। এজন্য নিয়মিত কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অ্যাভোকাডো, কলা, টকদই, মধু, মেয়নেজ, নারকেলের দুধ, ভিটামিন-ই অয়েল, অ্যালোভেরা জেল চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অর্ধেক অ্যাভোকাডো, একটা পাকা কলা এবং এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার চুলে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে সালফেটমুক্ত কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক চুল কন্ডিশন করবে। ফলে রুক্ষতা কমবে এবং চুল পুষ্টিও পাবে।
রঙ-করা চুলের পুষ্টির জন্য প্রোটিন মাস্কও আবশ্যক। কারণ রঙ করলে চুলে থাকা কেরাটিন নামক প্রোটিনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারে আজকাল প্রচুর প্রোটিন মাস্ক কিনতে পাওয়া যায়। আবার বাড়িতেও এ ধরনের মাস্ক বানিয়ে নিতে পারেন। একটা ডিম এবং দুই টেবিল চামচ মেয়নেজ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান। চুলের ডগায় বেশি করে লাগান। এবার শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর সালফেটবিহীন কোনো শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh