চিরসবুজ সুস্মিতা

সুস্মিতা সেন। মিস ইউনিভার্স তথা বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট বিজেতা সর্ব প্রথম ভারতীয় ও বাঙালি নারী। যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ৫ ফুট সাড়ে ৯ ইঞ্চি উচ্চতার ছিপছিপে ও লাস্যময়ী এক রমণীর চেহারা। 

১৯৭৫ সালে হায়দ্রাবাদের অন্ধ্র প্রদেশে জন্ম নেয়া এই গ্ল্যামার কন্যা যখন মিডিয়ায় পা রাখেন তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। সুস্মিতার শুরুটা র‌্যাম্পে হাটা ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে হলেও বলিউডের বৃহৎ আঙিনায় আলো ছড়াতে খুব একটা বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। আর এটি সম্ভব হয়েছিল ১৯৯৪ সালে সারা পৃথিবীর অজস্র প্রতিযোগীর নিজের রূপ ও বুদ্ধিমত্তার ঝলকানিকে পরাজিত করে মিস ইউনিভার্স মুকুট জয়ের মাধ্যমে। 

১৬ বছর বয়সে বিশ্বসেরা সুন্দরী হিসেবে আলো ছড়াতে না ছড়াতেই সুস্মিতার ডাক আসে বলিউড থেকে। ১৯৯৬ সালে দস্তক সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন সুস্মিতা। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সে কিশোরী সুস্মিতা বিশ্ব জয় করে ফেললেও বলিউডে শুরুটা অত মসৃণ ছিল না তার। আর এর অন্যতম কারণ হলো তার প্রথম সিনেমা দস্তকের বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া। তবে দস্তক মুখ থুবড়ে পড়লেও সুস্মিতা মুখ থুবড়ে পড়েননি। বরং ধৈর্য না হারিয়ে আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের মতো করে হাঁটতে লাগলেন বলিউডে। 

আর এই ধৈর্যশীলতাই তাকে করে দিল বছর তিনেক পর বিবি নাম্বার ওয়ান সিনেমার ব্যাপক সাফল্যের অংশীদার। ১৯৯৯ সালের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী ব্যবসাসফল এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সুস্মিতা যেমন রাতারাতি হয়ে উঠলেন দর্শকদের হৃদয়ের রানী, তেমনই জিতে নিলেন ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার। 


তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়। পরের বছর ‘স্রেফ তুম’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে একই ক্যাটাগরিতে আবারো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়ে সুস্মিতা প্রমাণ করে দিলেন তিনি তার রাজ্য গুটাতে না বরং রাজ্যের সীমানা আরো বিস্তৃত করতেই বলিউডে এসেছেন। পরপর দুইবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতার মাধ্যমে সুস্মিতা সেন সাফল্য নামক যে পথের সন্ধান পেলেন সেই পথ ধরেই তরতর করে উঠে গিয়েছেন সাফল্যের শিখরে। তাকে আর না হয়েছে পেছনে ফিরে তাকাতে কিংবা না হয়েছে গতি হারিয়ে ছিটকে পড়তে। আর এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন বলউডের জনপ্রিয় নায়িকাদের একজন। 

জনপ্রিয়তা নামক এই পরশ পাথর আঁচলে বেঁধে সুস্মিতার বলিউডে চলার পথে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন বেড়েছে তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা তেমনই বেড়েছে সাফল্য। ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি ম্যায় হুঁ না, ফিজা, ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া, নো প্রবলেম, জোর, আখে, জিন্দাগি বক্স প্রভৃতি সুস্মিতাময় সিনেমা। সেসময় সুস্মিতা কতটা মাত করে রেখেছিলেন বলিউড তার প্রমাণস্বরূপ দিলবার দিলবার নামক আইটেম গানের মাধ্যমে নব্বই দশকের তরুণদের মাত করে রাখার একটি উদাহরণই যথেষ্ট। 

তবে বলিউডের মাধ্যমে উত্থান ও সেলিব্রেটির তকমা গায়ে লাগালেও নিজের আলো থেকে নিজের শিকড় তথা বাংলা চলচ্চিত্রকেও বঞ্চিত করেননি এই বাঙালি ললনা। তার অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র দুটির নাম যদি এমন হয় ও নির্বাক। স্রোতের জোয়ারে গা না ভাসিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে চলা এই নারীর চলচ্চিত্রের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় কম হলেও তার অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্রই হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থায়ী আসন পাবার মতো। অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃঢ়চেতা এই নারীর ক্যারিয়ারে যেমন জমা হয়েছে সফল্যের অসংখ্য পালক তেমনই তিনি ফিরিয়েও দিয়েছেন অসম্ভব আকাশচুম্বী সুযোগের হাতছানিও। 

১৯৯৫ সালে দুনিয়া কাঁপানো সিনেমা জেমস বন্ড সিরিজের গোল্ডেন আই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েও কোনো কারণে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার উদাহরণ টানলেই দৃঢ়চেতা ও নির্লোভ সুস্মিতা সম্পর্কে আর দ্বিতীয় বাক্য ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না। 


গত ১৯ নভেম্বর ছিল ৪৪ বছর বয়সী এই চিরসবুজ নায়িকার জন্মদিন। দীর্ঘদিন অভিনয়ের বাইরে থাকা এই অভিনেত্রী সম্প্রতি আবারও আলোচনায় এসেছেন। তবে এবারের আলোচনার নেপথ্যে রয়েছে তার হাঁটুর বয়সী প্রেমিক। নিজের চেয়ে ১৬ বছরের ছোট প্রেমিকের সাথেই আজকাল বেশ সময় কাটছে এই লাস্যময়ী কন্যার।

তবে এতে তার ভক্তদের নিরাশ হবারও কারণ নেই। কেননা তিনি আবারও পর্দায় ফিরছেন। শোনা যাচ্ছে শিগগিরই একটি ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে আবারো রুপালি পর্দায় আলো ছড়াবেন এই নায়িকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //