ম্যাজিক গদ্যের ‘নীল সার্কাসের ঘোড়া’

শান্ত একটা নদী। জল নিস্তরঙ্গ; বিকেলে আলো-হাওয়া পড়েছে সেই নদীর জলে। হুলুস্থুল স্রোত সেখানে নেই। তবু বয়ে চলে নদী। সবার নয়, কারও কারও এমন নদী ভালো লাগে। এমন নদীর মতো গদ্যে কখনো পিউ ফিরে আসে, কখনো সুরোর গল্প উঠে আসে।

লেখক সুজন সুপান্থ যাকে মুক্তগদ্য বলছেন সেটাকে ম্যাজিক গদ্যও বলা যায়। কেন বলা যায়, তার একটা ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যেতে পারে।

ধরা যাক, একজন একটা গল্প বলবে। তাতে চরিত্র থাকবে, আবহ থাকবে, স্থান থাকবে, ঘটনা থাকবে, পরিণতি থাকবে এবং লেখক সচেতনভাবেই চরিত্রের সঙ্গে সুবিচার কিংবা অবিচার করে থাকেন। পাঠক, এবার তাহলে সুরোর গল্পে ফেরা যাক।

গানে গানে যখন বিকেলের কোমল আলো সন্ধ্যার ভেতর ঢুকে যায় তখন সুরোর দেখা পাওয়া যায়। তাকে পাগলি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। প্রেম ছিল তার। এর এক বয়ানও পাওয়া যায়। এরপর আরেকটি চরিত্র দিয়ে তাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। এক নির্জন ঘন জঙ্গলে সুরোকে আবিষ্কারের নেশায় মেতে ওঠা যায় অঙ্কে শূন্য পাওয়া ব্যথা পড়তে পড়তে। মিহি গদ্যে সেই বয়ান এগিয়ে চলে জীবনে সমূহ যন্ত্রণা যাপনের মধ্য দিয়ে।

কবিতার নির্জনতা চাই। হইহুল্লোর ঠেলে পদচ্ছাপ পড়া মাঠের এক কোণ থেকে কবি যেভাবে যাপিত জীবন দেখেন সুজন সুপান্থও তাঁর ম্যাজিক গদ্যে একইভাবে সুরোর গল্প উপস্থাপন করেন। তবে লজিক্যাল সিকোয়েন্স মেনে এই গল্প এগোয় না। সুরোর মুখে শোনা যায়, শূন্যের নামতার গল্প। মিইয়ে যাওয়া জীবনের গল্প। বাধা পেরিয়ে দাবি না খাটানোর গল্প। জানিয়ে দেয়, পাতার দুঃখের কাছে না বসে ঝরা পাতার জীবন, নিশ্চল বৃক্ষের জীবন অনুধাবন করা যায় না।

একইভাবে ফিরে আসে পিউকাঁহার গল্প। সেখানেও অতৃপ্তি। সেখানেও না পাওয়ার বেদনা, সেখানেও নির্জনতা। সেখানে এক চিকলির বিল আছে। আছে নির্জনতম শ্মশান। সেখানে অনেকের ভিড়ে সন্ধ্যায় কিশোর হারিকেনের আলোয় দেখে পিউকে। আবার ছন্দে ছন্দে পিউ আসে শ্মশানের এক অন্তিম যাত্রায়। চেনা গল্পের বয়ানে কিশোর তার পঙ্খিরাজ ঘোড়া নিয়ে ছুটে যায়। তবে তাকে খুব বেশি দূর ছুটতে দেওয়া হয় না। কারণ পরক্ষণেই বেড়ি পড়া কিশোরকে পাওয়া যায়। সাধারণ ঘটনার অসাধারণ বয়ান ধরা পড়ে।

মিহি গদ্যে পিউয়ের ব্যথা লিখে যান লেখক। আর যৌথ দুঃখ-ব্যথা বাজানোর মতো পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়ে লেখক আবারও স্মরণ করিয়ে দেন, এখানে বেদনার কাব্য লেখা হচ্ছে। এখানে কিশোরের যন্ত্রণা আছে, এখানে রমণের আনন্দের চেয়েও না পাওয়ার তীব্রতা আরও বেশি। এখানে মিলনোত্তম বাঘিনীর মতো কেউ গর্জন করে না। শান্ত নদীর নিস্তরঙ্গ জলের মতো বয়ে যায় ম্যাজিক গদ্য ‘নীল সার্কাসের ঘোড়া’।

যারা সুজন সুপান্থ’র ‘মেঘের ভেতর মীন’ পড়েছেন তারা হয়তো মিল খুঁজতে গেলে খানিকটা অস্বস্তিতেও পড়তে পারেন। ‘নীল সার্কাসের ঘোড়া’য় গল্প বলার ঢংয়ে পরিবর্তন এসেছে। বলা যায়, মেঘের ভেতর মীনে গল্প ব্লার। আছে, তবে তা চাইলে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া যায়। ‘নীল সার্কাসের ঘোড়া’য় সেই সুযোগ নেই। এখানে লেখক শুধু গল্প বলেই ক্ষান্ত হন না, কেন সেই গল্প—সেটাও বলে যান। জমাট গল্প পাওয়া যায় ‘নীল সার্কাসের ঘোড়া’র ম্যাজিক গদ্যে।

নীল সার্কাসের ঘোড়া

মুক্তগদ্যের বই

লেখক: সুজন সুপান্থ

প্রচ্ছদ: মাহফুজ রহমান

প্রকাশক: স্বপ্ন'৭১ প্রকাশন

বইমেলায় স্টল নম্বর: ১৯০

দাম: ১৫০

বইমেলা ছাড়াও কারওয়ান বাজারে প্রথমার আউটলেটে সরাসরি এবং প্রথমা ও রকমারি ডটকমে অর্ডার করেও বইটি সংগ্রহ করা যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //