২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সরকারের আর্থিক প্রস্তাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধন কল্পে আনীত বিলটি (অর্থবিল, ২০২০) পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে ৪২১টি ছাটাঁই প্রস্তাব আসে। দেশের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫৯টি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির ৯ জন সংসদ সদস্য এই ছাটাঁই প্রস্তাব দিয়েছেন। ৫৯টি দাবির মধ্যে সংসদ সচিবালয় এবং লেজিলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে কোনো ছাটাঁই প্রস্তাব নেই। অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একটি করে ছাটাই প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের চার থেকে ৯টি করে ছাঁটাই প্রস্তাব রয়েছে।
সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, এসব দাবির মধ্যে সময় বিবেচনা করে দুই/তিনটির ক্ষেত্রে আলোচনার কথা বলেন। এক্ষেত্রে তিনি আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের প্রস্তাব পেয়েছেন এ দুইটি মন্ত্রণালয়ের দাবির বিপরীতে ৯টি করে ছাঁটাই প্রস্তাব রয়েছে।
এর আগে ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের সহায়তা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই ধরা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয় বা সরকারী কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বর্হিভূত প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে যাবে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য উন্নয়নখাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
এর আগে গত ১০ জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপর দুদিনের জন্য অধিবেশন মূলতবি করা হয়। এরপর বিরতি দিয়ে গত ২৩ জুন এক কার্যদিবস চলার পর এই অধিবেশন মুলতবি দেয়া হয়।