আমরা মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি: ড. সেলিম

বাজেট আলোচনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম উদ্দিন বলেন, জাতীয় বাজেট ২০২০-২১  এমন সময় ঘোষিত হয়েছে, যখন বিশ্বের অধিকাংশ অর্থনীতিসহ আমাদের অর্থনীতির প্রায় সব খাত কভিড-১৯ এর কারণে অস্বাভাবিক, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।  বাজেট ২০২০-২১ মূলত দুইটি ভিত্তিকে কেন্দ্র করে যথা- মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো এবং বিগত কয়েক মাসে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে গৃহীত বিভিন্ন নীতি, কৌশল এবং প্রণোদনাকে প্রাধান্য দিয়ে রচিত হয়েছে। 

ড. সেলিম আরো বলেন যে, জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ পরিপূর্ণ ভাবে বিশ্লেষণ করলে কমপক্ষে ছয়টি প্রধান মৌলিক অঙ্গীকার স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়। ছয়টি মৌলিক অঙ্গীকার হলো: ১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত  ১,০৩,১১৭  কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনার দ্রুত বাস্তবায়ন ২. সরকারি ব্যয়ে কর্ম সৃজনকে প্রাধান্য দিয়ে গুনগত মানে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা ৩. বিলাসী ব্যয় হ্রাস ও নিরুৎসাহিত করা ৪. স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা ৫. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং ৬. বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে যথাযথ তারল্য বজায় রাখা। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন-বিএইচবিএফসির চেয়ারম্যান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-আইবিবিএলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, এফসিএ, এফসিএমএ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘‘ন্যাশনাল বাজেট ২০২০-২১’’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে মনোনীত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি এসব কথা বলেন।

করোনাকালীন দুর্যোগের জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ কে সফলভাবে বাস্তবায়নে সমর্থ হলে কভিড-১৯ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তের জন্য কল্যাণকর কার্যসম্পাদন, দরিদ্র, স্বল্প আয়ের ও সাম্প্রতিক কর্মবিচ্যুত লোকগুলোকে পুনর্বাসন করা, সকল ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক খাতগুলোকে পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা, অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এমন পদক্ষেপ এবং বরাদ্দের দিকে মনোনিবেশসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ধনাত্মক প্রভাব বিস্তার করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন যে, বাজেটের সুফল, ভাল ও ধনাত্মক প্রভাব, কার্যকারিতা এবং সর্বোপরি সফলতা বাস্তবায়নের উপর অবশ্যই নির্ভরশীল। এই প্রেক্ষিতে ড. সেলিম চার টি ধারণার কথা উল্লেখ করেন যেটাকে তিনি নিজের ভাষায় পেস্ট (PEST) নামে অভিহিত করেন। যেমন:  P মানে Properly অর্থাৎ বাজেট আইনকানুন নিয়ম নীতি অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। E মানে Efficiency অর্থাৎ আউটপুট ইনপুট অনুপাত সর্বাধিকসহ উৎপাদনশীলতার দিকে সবিশেষ নজর দেয়া। S মানে Sincerely  অর্থাৎ আন্তরিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশের এবং ন্যায় নীতির কথা বুঝানো হচ্ছে। সর্বশেষ T মানে Timely অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে মানে সমকালীনতায় জোর দিয়ে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া। কভিড-১৯ মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাবে তা এখনও অজানা। বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছেনা যে, অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে। 

তিনি বলেন, সবকিছু বিবেচনা করলে মনে হচ্ছে, আমরা মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি। তাই অচিরে আমাদের অর্থনীতি তথা জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে সেই ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাব কে মাথায় রেখে তৎকালীন ইউএস প্রেসিডেন্ট হারবাট ক্লার্ক হুভারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রোজভেল্টের সেই অর্থনীতির ধারণা সম্বলিত ‘‘নিউ ডিল’’ এর অনুকরণে সার্বিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মেনার্ড কেইনসের মতবাদ ১৯২৯ এর মহামন্দায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কেইনসের মতে মহামন্দায় সরকারি হস্তক্ষেপসহ চাহিদা বৃদ্ধিতে জোরালো ভূমিকা রাখা ছাড়া অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনায়ন করা খুবই কঠিন। তাই ড. সেলিম এই বাজেট বাস্তবায়নের ফলে সরকারি ব্যয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তবে আয়ের দিক এবং ঘাটতি অর্থায়নের সকল ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।

ড. সেলিম আরো উল্লেখ করেন যে, কভিড-১৯ মহামারিতে ধ্বংসাত্মক অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে এবং বাজেট ২০২০-২১ এর সফল বাস্তবায়নে অবশ্যই জন সম্পৃক্ততার বিষয়টি সরকার এবং সচেতন জনগণকে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ জনগণকে সরকারের গৃহিত নীতি, কৌশল ও প্রণোদনার প্রতি অবিরত সমর্থন এবং সরকার ও পেশাগত দক্ষতা সম্পন্ন লোকদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তখনই যেকোন মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে সকল কৌশলাদী অধিকতর কার্যকর হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ফাইনান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে একই বিভাগের প্রফেসর ড. সালেহ জহুর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রফেসর নছরুল কাদির, প্রফেসর ড. জান্নাত আরা পারভিন, প্রফেসর ড. ইসমত আরা হক, প্রফেসর ড. জামাল, প্রফেসর ড. সোহরাব আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন প্রফেসর সালামত উল্লাহ ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //