কৃচ্ছ্রতা সাধনই এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। এ অর্থবছরের বাজেট হচ্ছে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট যার আকার দাঁড়াচ্ছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪.৬০ শতাংশ বেশি, টাকার অঙ্কে বাড়ছে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া, আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। সেখান থেকে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি কমছে ২৭ হাজার কোটি টাকাঅ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফের পরামর্শে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সর্বোচ্চ প্রয়াস নেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। অন্যদিকে বাজেটে ব্যয়ের অঙ্ক না বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

চলতি বছর বাজেটের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। অর্থমন্ত্রী মোট ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন; যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে চার শতাংশের একটু বেশি।

এবার প্রথম দিকে বাজেটের আকার আট লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত বড় বাজেট বাস্তবায়নে যে অর্থের প্রয়োজন তা সঙ্কুলান করা রীতিমতো দুরূহ হয়ে পড়বে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিবেচনায় বাজেটের আকার যাতে কোনো অবস্থায় আট লাখ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করতে না পারে সে ‘সীমারেখা’ টেনে দেয়া হয়। তাই চূড়ান্ত পর্যায়ে আট লাখ কোটি টাকার নিচেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বাজেটের আকারে কৃচ্ছ্রতা সাধনের চিত্রই ফুটে উঠেছে।

প্রথম বাজেটের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্থনীতিকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনাই হবে আগামী বাজেটে অগ্রাধিকারের বিষয়।

পাশাপাশি নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং জীবনযাত্রার মান যেন সীমার মধ্যে থাকে, সেটিও নিশ্চিত করা হবে।

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রধান আয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ।

এবার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে এনবিআরকে। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের চ্যালেঞ্জ থাকছে আগামী বাজেটেও।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি থাকছে অনুদানসহ ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪.৬০ শতাংশ। এই বিশাল ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এছাড়াও, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণ। পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের ‘জিপিএফ’ থেকে নেয়া হবে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে অর্থমন্ত্রীর জন্য ৩২৯ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা তৈরি করা হয়েছে। অতীতে এত বড় বাজেট বক্তৃতা আর প্রণয়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে।

তবে এই বিশাল বাজেট বক্তৃতা ৮২ বছর বয়সি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে পুরোটা পড়তে হবে না। তিনি তার এই বাজেটের সারাংশ স্লাইডের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //