শেয়ারবাজারের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এলো ২৪-২৫ বাজেট

শেয়ার বাজারে ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধনি মুনাফার ওপর কর বসাতে যাচ্ছে সরকার– এতদিন এ খবর ছিল গুঞ্জন আকারে। তবে এবার তা সত্যি সত্যি এমনটা হলো। জানা গেছে, শেয়ার কেনাবেচায় নির্দিষ্ট অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি যত টাকা মুনাফা হবে, তার ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। ফলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য দুঃসংবাদ আকারে দেখা দিলো নতুন বাজেট।

আজ বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যে বাজেট পেশ করছেন, তাতে এমন প্রস্তাব রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র এমনটাই জানিয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার অপরিবর্তিত থাকলেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ কমানো হচ্ছে। এতে করহার ব্যবধান বর্তমানের সাড়ে ৭ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশে নামবে।

টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, দলে দলে সব শেয়ার বেচে বাজার ছাড়ছেন তারা, তখন নীতি-সহায়তার পরিবর্তে করের চাপ বাড়ালে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শুধু এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসের দরপতনে ৯৪ হাজার বিনিয়োগকারী সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। ফলে বাজারের জন্য এখন দরকার সরকারের নীতি-সহায়তা। অথচ তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান কমিয়ে তালিকাভুক্ত হতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির বর্তমান করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। এর কম শেয়ার বিক্রি করে তালিকাভুক্ত হলে, তাদের করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে এ করহার আড়াই শতাংশ হারে বাড়িয়ে যথাক্রমে সাড়ে ২২ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে। তবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করার শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে উভয় ধরনের কোম্পানির করপোরেট করহার থেকে আড়াই শতাংশ করে ছাড় দেওয়ারও প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।

ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তটি হলো– ৫ লাখ টাকার বেশি একক যে কোনো লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে এবং বার্ষিক ব্যয়ে নগদ লেনদেন কোনোভাবেই ৩৬ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। অবশ্য এ শর্ত নতুন নয়। চলতি অর্থবছরেও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো– এখনকার নির্ধারিত করহার কম। তবে শর্ত না মানলে তা আড়াই শতাংশ বেশি দিতে হচ্ছে। নতুন কর প্রস্তাবে আগেই করহার বাড়ানো হচ্ছে। শর্ত মানলে করছাড় দেওয়ার কথা বলা হবে।

এদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার না কমালেও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন না করলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়েছে। এবার এ শর্ত পূরণ করতে না পারলে সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারে নতুন করে কোম্পানি আসা যখন প্রায় বন্ধের পথে, তখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত করহার ব্যবধান কমানো হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এ ব্যবধান ছিল ১০ শতাংশ। পরে তা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এখন তা ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে নতুন করে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আরও নিরুৎসাহিত হবে। সরকারের এ নীতির ফলে শেয়ারবাজার সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় আরও পিছিয়ে পড়বে ও সংকুচিত হবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের প্রতি ‘বিমাতাসুলভ’ ও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ‘বাজারকে স্বাভাবিক করতে তারা সরকারের কাছে নীতি-সহায়তা চেয়েছিলেন। সরকার উল্টো করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।’ 

মূলধনি মুনাফায় করারোপ এবং তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান কমানোর খবরে হতাশা ব্যক্ত করেছেন খোদ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলেন, এটা ঠিক হচ্ছে না। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে করপোরেট করহার ব্যবধান বাড়ানো উচিত। মূলধনি মুনাফায় কর আরোপের খবরেও তিনি একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এই কর প্রস্তাব যাতে সরকার প্রত্যাহার করে নেয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //