বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে : প্রতিক্রিয়ায় রাজনীতিকরা

২০২০-২০২১ প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় রাজনীতিবিদরাও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২০-২০২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তব প্রত্যাশার দলিল।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকালে সংসদ ভবনে তার সরকারি বাসভবনে বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

কিন্তু তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের রাজনীতিকরা। তারা বলছেন, দু:সময়ের এই বাজেট জনগণের জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনবে না। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে বাজেট সামঞ্জস্য নয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী সময়োচিত চিন্তার সোনালি ফসল এ বাজেট। এবারের বাজেট জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উত্তরণের পরিকল্পনা এবং জনবান্ধব ও জীবনঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়ার জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া আগেভাগে তৈরি করা মনগড়া, গতানুগতিক পুরনো গল্প।

জনগণের জীবন-জীবিকা ও মানবতার বিষয়টি এবারের বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় আমীর খসরু বলেন, জিডিপি এবং রাজস্ব আহরণ যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।

তিনি বলেন, বাজেটে বরাদ্দের বড় বড় অংশ মেগা প্রজেক্টে দেয়া হয়েছে, যেগুলো এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। এগুলো চাইলেই অপেক্ষা করা যেতো। এই বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসার কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিলো না।

যে প্রক্রিয়ায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে তা দুর্নীতি চলমান রাখার একটা চেষ্টা বলেও দাবি করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নটা এবার চ্যালেঞ্জ হবে। তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়কে সমন্বয় করতে হবে এবং যথাযথ খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বরাদ্দ ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টিও চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে বাজেট-উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেছেন স্বাভাবিকভাবেই তা পূর্ণ করা বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে জনকল্যাণমুখী বাজেট দিতে চেষ্টা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাজেটে বড় ধরনের একটি ঘাটতি আছে, গত বছরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে আয় এবার বেশি ধরা হয়েছে। যা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে না। সেক্ষেত্রে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। তাই যথাযথ খাত নির্দিষ্ট করে যেন খরচ করা হয় এবং সেভাবেই বরাদ্দ দেয়া হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্যখাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান বাস্তবতায়। তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতেও যথেষ্ট বরাদ্দ দরকার। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হতে পারে তার জন্য সরকারকে অর্থায়ন করতে হবে। এছাড়া যে অর্থ বরাদ্দ হবে তা যেন যথাযথভাবে খরচ হয়, সেজন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দুর্নীতিমুক্ত ও অপচয় রোধ করে যথাযথভাবে জনকল্যাণে যেন বরাদ্দ ব্যয় হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তবেই বাজেট জনকল্যাণমুখী হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অতি ধনীদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ কোটি টাকা কর আদায়ের দাবি করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো ও কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব সমালোচনা করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন, বাংলাদেশ সুপার রিচ বা অতিধনীদের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশে পাঁচ লাখ ব্যক্তি আছে, যারা এক কোটি টাকা ব্যক্তিগত আয়কর দিতে পারেন কিন্তু দেন না। এই পাঁচ লাখ সুপার রিচ বা অতিধনীদের তালিকা করে তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ট্যাক্স আদায়ের কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে বাজেট বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের ওপরে নির্ভরশীলতা কমে যাবে।

জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির দুই শীর্ষ নেতা বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার শুরু এবারের বাজেট থেকেই হওয়া উচিত ছিলো। বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কিছু বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হলেও তা খুবই সামান্য।

প্রস্তাবিত বাজেটকে মানুষের স্বার্থবিরোধী বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি। সিপিবি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের ৯৯ শতাংশই মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম।

বর্তমান ভোট ডাকাতির সংসদের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই বলে দাবি করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন দাবি করেন জোট নেতারা।

প্রতিক্রিয়ায় জোট নেতারা বলেন, জনগণের ভোট ছাড়া গায়ের জোরে ক্ষমতাসীন এ সরকারের এবারের বাজেট পূর্বের মতোই গতানুগতিক, ঋণনির্ভর ও ঘাটতি বাজেট।

বাজেটের আকার বাড়লেও তাতে কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, গবেষণা, কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দ ‘আনুপাতিক হারে তেমন বাড়েনি’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস দুর্যোগে আক্রান্ত খাতগুলো আলোচনায় যতটা এসেছে বাজেটে ততটা মনোযোগ পায়নি।

আয়কর নিয়ে তিনি বলেন, উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে গত বাজেটে ৩০ শতাংশ কর ধার্য করা ছিলো এবার সেটা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। অথচ মাসে ২৫ হাজার টাকার উপর আয় করলে তাকে করের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ পরোক্ষ কর দিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু যারা সৎ-অসৎ নানা উপায়ে বিপুল সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বরং উৎসে কর, কর্পোরেট করসহ নানা ক্ষেত্রে রেয়াত দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করে খালেকুজ্জামান বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে আগের চেয়ে আরো নমনীয় শর্তে। কিন্তু এ যাবৎ ১৬ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার পরও মাত্র ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে, যার মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকাই ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগে দুর্নীতি আরো বাড়বে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //