এলডিসি থেকে উত্তরণ

শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দিতে হবে

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ দেশের জন্য সম্মানজনক। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানি বাণিজ্যে। 

পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবে না। এ কারণে রফতানি আয় বর্তমানের অন্তত ১৪ ভাগ কমে যেতে পারে। এই অভিঘাত থেকে সুরক্ষা পেতে এলডিসি উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দিতে হবে। 

একইসাথে জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অন্যান্য প্রচলিত-অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত সব দেশ ও সরকারের সাথে দরকষাকষির কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

গতকাল রবিবার (২০ ডিসেম্বর) ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি’ বিষয়ক এক ওয়েবিনারে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে আঞ্চলিক জোট, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। কোনো কোনো দেশ ও জোটের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার কথাও বলেছেন তারা। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত জোটেও অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সুযোগ খুঁজতে হবে, যেমন- চীনা নেতৃত্বাধীন রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)।

অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ), গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফল ডেভেলপেমন্ট (র‌্যাপিড) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ওয়েবিনারের আয়োজন করে। জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। দীর্ঘদিন এলডিসির মধ্যে পড়ে থাকা দেশের জন্য সম্মানের বিষয় নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাণিজ্য বিঘ্নিত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই কী হবে সেটা কেবল ২০২৪ সালেই বোঝা যাবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইইউর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সাথেও এই আলোচনা করা যায়। একইোথে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথেও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ আমদানি রফতানিতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ আছে প্রতিবেশিদের সাথে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি নিয়ে দুঃচিন্তার কিছু নেই। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার জন্য বিডার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। 

বাণিজ্য সচিব বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরেও যেন অতিরিক্ত আরো কয়েক বছর শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়া যায, সে চেষ্টা করছেন তারা।

মূল প্রবন্ধে ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, মোট রফতানির ৭৫ শতাংশ এখন শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা হারানোর পাশাপাশি পণ্যে প্রণোদনা দেয়া যাবে না। শুল্ক বাড়বে গড়ে ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় বাজার ইইউতে বাড়বে ৯ শতাংশ, কানাডায় ১৭, চীনে ১৬ দশমিক ২ ও জাপানে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ফলে রফতানি কমে যেতে পারে ৭০০ কোটি ডলারের মত। 

সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিয়েতনামের সাথে জোটের এফটিএ হয়েছে। পযায়ক্রমে দেশটির শুল্ক কমছে ইইউতে। ২০২৭ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের পণ্য যাবে বিনা শুল্কে । যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ হবে। তখন কঠিন অবস্থায় পড়বে বাংলাদেশ। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অতিরিক্ত তিন বছর বাজার সুবিধা প্রলম্বিত করার আলোচনা শুরুর পরমার্শ দেন তিনি। আগামী ২০২৩ সালে ইইউ জিএসপি পর্যালোচনা হবে। সেই আলোচনা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে হবে বাংলাদেশকে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের অভিঘাত মোকাবেলায় আরো বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন তিনি। এর মধ্যে উৎপাদন ও রফতানি সক্ষমতা বাড়ানো, খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার ও দ্বিপাক্ষিক কৌশলি অবস্থান নির্ধারণ অর্থাৎ পরিস্থিতি বুঝে কোনো দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক আবার কোনো দেশের সাথে জোটভুক্ত হওয়া যেমন, আরসিইপি বা টিপিপিতে যুক্ত হওয়া। এছাড়া শুল্ক হার ক্রমান্বয়ে আরোপের সুযোগ নেয়া। 

ড. রাজ্জাক রফতানির স্বার্থে আমদানি নীতি সংস্কার, জিডিপি অনুপাতে কর বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন।- বাসস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //