গুলশানের ফু ওয়াং বারের ৪১ কোটি আট লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি বলেন, ফু ওয়াং বোলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ৪১ কোটি আট লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বারের মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধানের জন্য শুল্ক গোয়েন্দাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গুলশানের ফু ওয়াং বোলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড নামে বারটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের সেবা প্রদান করে।
অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সি এ রিপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট সার্কেল অফিস থেকে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। এসব যাচাই করে দেখা যায়, ফু ওয়াং বার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত।
ধারণা করা হচ্ছে, বারের মদজাতীয় পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করার জন্য এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দাকে অনুরোধ করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তররের উপপরিচালক ফেরদৌসী মাহবুবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল অভিযান পরিচালনা এবং তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে।
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য কয়েক দফায় সময় দেওয়া হলেও আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেনি। একাধিকবার এ সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করলেও প্রতিষ্ঠানটি চাহিদা অনুযায়ী দলিল দাখিল থেকে বিরত ছিল।
তদন্তে দেখা গেছে, ফু ওয়াং বোলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের বার্ষিক অডিট রিপোর্টে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে ১৪১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬০ টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটি মাত্র দুই কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮২ বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করে এবং ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৮ টাকার বিক্রয় কাগজপত্রে কম দেখায়।
বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২০ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার ৪৭২ টাকা উদঘাটন করা হয়। যেখানে দুই শতাংশ হারে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯২ টাকার সুদ প্রযোজ্য।
এছাড়া, তদন্ত দেখা যায়, বার্ষিক অডিট রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর্তন খাতে কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৩১ টাকা। অপরদিকে, স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে অপরিশোধিত মূসক বা ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ১১ হাজার ৫৮ টাকা। এখানেও দুই শতাংশ হারে ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ টাকার সুদ প্রযোজ্য।
অপরিশোধিত ভ্যাট ও সুদ বাবদ সর্বমোট ৪১ কোটি আট লাখ আট হাজার ২৪০ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়। ভ্যাট ফাঁকির মামলাটি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, এ সংক্রান্ত আয়কর নথিতে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তাও অনুসন্ধান করার জন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলকে (সিআইসি) অনুরোধ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ভ্যাট গোয়েন্দা
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh