আইএমএফের ঋণ নিতে হলে মানতে হবে শর্ত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ নিতে হলে বাংলাদেশকে সংস্থাটির শর্ত মানতে হবে। অন্যথায় সংস্থাটির ঋণ পাওয়া যাবে না।

জানা গেছে, বিভিন্ন খাতে দেওয়া সরকারি ভর্তুকি কমানোর শর্ত দিতে পারে আইএমএফ। আবার, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সংস্কারেরও শর্ত দিতে পারে সংস্থাটি। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া-সংক্রান্ত সপ্তাহব্যাপী বৈঠকে এমন আরো কিছু শর্ত থাকতে পারে। আজ রবিবার (১৭ জুলাই) আনুষ্ঠানিক এ বিষয় আলোচনা করা হবে।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের চাপ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে সরকার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের কাছ থেকে এর আগে কখনোই এত বড় অঙ্কের ঋণ চায়নি বাংলাদেশ। 

সর্বশেষ ২০১২ সালে ৯৯ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত মোট তিন দফায় আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার।

আইএমএফের ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য সংস্থার ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ঢাকায় এসেছে। সংস্থার এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভাগীয় প্রধান রুহুল আনন্দ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

আজ রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক দিয়ে এ আলোচনা শুরু হবে। এদিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)সহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসবেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। 

এ সফরের পর পরবর্তী ধাপের আলোচনার জন্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক সুরজিত বালার নেতৃত্বে অন্য আরেকটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। ওই সফরে আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত এবং অন্যান্য আলোচনা চূড়ান্ত হতে পারে। এরপর ঋণ অনুমোদনের জন্য ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হবে।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের স্বার্থের অনুকূলে থাকে এমন শর্ত মানতে কোনো অসুবিধা নেই। বিভিন্ন সময়ে সিপিডিসহ অন্যান্য গবেষণা সংস্থা এবং ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা রাজস্ব ও ব্যাংকিং সংস্কার এবং সরকারি ব্যয়ে সংস্কারের সুপারিশ করে আসছেন। তবে শোনা যাচ্ছে, আইএমএফ সরকারের ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে শর্ত দিতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সে বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। কারণ এই মুহূর্তে ভর্তুকি কমালে সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে। অতীতে আইএমএফ এ রকম অনেক শর্ত দিয়েছে, যা শতভাগ বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল না। অনেক শর্তের কারণে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত ছিল- এ রকম নজিরও আছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের একাধিক বৈঠক হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সাথে তাদের বৈঠক হবে দু-তিন পর। অর্থমন্ত্রী এখনো দেশের বাইরে রয়েছেন। ফাতিমা ইয়াসমিন নতুন দায়িত্বে আজ রবিবার যোগদান করেছেন। আইএমএফ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার সুবিধার্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সর্বসাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক সার আমদানি দায় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মজুত কমছেই। সর্বশেষ হিসাবে মজুত এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত মাসে অর্থ সচিব থাকাকালে আব্দুর রউফ তালুকদার আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সাথে ভার্চুয়াল আলোচনায় ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //