বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কা আসছে

দেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। আর ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাবে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছে। পরিমাণের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের সময়সূচি হিসাবে দেশটিকে সবচেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ‘বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগা প্রকল্প : প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক অর্থায়ন সাশ্রয়ীভাবে হয়েছে, এটা বড় সন্তোষের জায়গা। এসব প্রকল্পে ৪৫টি ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ৫টি অনুদান, ৩৩টি সাশ্রয়ী ঋণ প্যাকেজ, আধাসাশ্রয়ী ২টি ও বাণিজ্যিকভাবে নিতে হয়েছে ৫টি ঋণ প্যাকেজ, যা চীন থেকে এসেছে। অর্থায়নটা ভালো হয়েছে বলতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক দায়দেনা ১৭ শতাংশে নিচে ও অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা ১৭ শতাংশের ওপরে। লক্ষণীয় হলো এটা আস্তে আস্তে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর দায়দেনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আর শীর্ষ ২০টি প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। ঋণের পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংশ ৩৬.৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, এরপর জাপানে যাবে ৩৫ শতাংশ এবং চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশ। যদিও পরিমাণের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়দেনা পরিশোধের সময়সূচি, তাতে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকে। বিরাট ধাক্কা সামলাতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কারণ কর জিডিপির পরিমাণ এখনো ১০ এর নিচে। 

এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, সাদা চোখে দেখতে পাচ্ছি দায়দেনার বড় ধাক্কা ২০২৪ ও ২০২৬ সালে আসবে। আমার বড় উদ্বেগের বিষয় সরকার ঋণের ৫০ শতাংশ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। সেটা পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তারল্য পাবে না। অন্যদিকে সেসব প্রকল্প শুরু হয়নি, অতি জরুরি না হলে তা স্থগিত করা প্রয়োজন। আর যেসব এগিয়ে চলেছে, কিন্তু ব্যয় কাঠামোর স্বচ্ছতা নেই, প্রকাশ্যভাবে দুর্নীতি কিংবা অতিমূল্যায়িত হয়েছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আর যেগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সেগুলোর দায়দেনার সময় কাঠামোকে পুনঃতফসিলিকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। 

আইএমএফর ঋণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার আইএমএফর সাথে আলোচনা শুরু করেছে, এটাই শুভকর ছিল। আইএমএফর কাছে শুধু টাকার জন্য যেকোনো দেশ যায় না, তাদের মতো প্রতিষ্ঠান পাশে থাকলে বিশ্ববাজারে আস্থার জায়গা তৈরি হয়। সাহায্য যাই হোক। মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করি।

আজকের আলোচনার ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১, মাতাবাড়ি ১২০০ মেগওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৫, লাইন-৬, পদ্মা ব্রিজ রেল সংযোগ, ফোর্থ প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এক্সপানশন হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কোভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যানডেমিক প্রিপারেডেন্স প্রকল্প ইত্যাদি। আর ২০টি মেগা প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ৭০.০৭ বিলিয়ন বা ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। যার ৬১ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০টি প্রকল্পের ১৫টিই সড়ক ও যোগাযোগসহ ভৌত অবকাঠামোগত খাতে। যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগ। বাজেটের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ গেছে মেগা প্রকল্পখাতে। মেগা প্রকল্পগুলো যতই যৌক্তিক হোক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতকে অবহেলার সুযোগ নেই। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০ এর নিচে। 

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে সবগুলো প্রকল্পের কাজ বাকি থাকবে। ২০টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্প ব্যয় সময় সময় বাড়ানো হয়েছে। আমি মনে করি ২০২৪ ও ২০২৬ সালে দায়দেনা পরিশোধে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়াটা ইতিবাচক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //