সরকার নিজেই যেনো মুদ্রাস্ফীতি ডেকে এনেছে

দেশে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে সরকারের ভর্তুকি কমে যাবে। তবে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। ইতোমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি সাত শতাংশের উপড়ে রয়েছে। সরকার যেনো মুদ্রাস্ফীতি নিজেই ডেকে আনলো।

গত শনিবার (৬ আগস্ট) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জিডিপির আকার ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্য ও জ্বালানির আমদানি খরচ বেড়েছে। এ কারণ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর কাছে ঋণ চাইতে বাধ্য হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার বিদ্যুৎ, শক্তি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৫১.২ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩০ টাকা, অকটেন ৫১.৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করেছে। আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারের সাথে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার জন্য মূল্য বৃদ্ধি অপরিহার্য ছিলো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ৮০১৪.৫১ টাকা লোকসান হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন দাম সবার কাছে সহনীয় মনে হবে না। তবে আমাদের কাছে অন্য কোনো উপায় ছিল না। জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। বিশ্বব্যাপী দাম কমলে পুনরায় তা সমন্বয় করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তাই এতো বেশি দাম বাড়ানো হবে আমি কল্পনাও করিনি। আমি জানি না সরকার এর মাধ্যমে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পূর্বশর্ত পূরণ করছে কিনা।

এদিকে সরকারের এই পদক্ষেপকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতির হার টানা নয় মাস ধরে ৬ শতাংশের উপরে ছিলো। যা গত জুলাই মাসে ৭.৪৮ শতাংশ ছুঁয়েছে। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে চাপে পড়েছে। এর ফলে দেশে সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি বেড়েছে।

বেসরকারি খাতের কর্মচারী মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি। এখন আবার সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, আমরা কীভাবে বাঁচব?

এর আগে, সরকার গত নভেম্বরে ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এর ফলে তখন পরিবহন ভাড়া প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমছে। গত শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৯০ ডলারেরও নিচে নেমে এসেছে।  গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দায় তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় দাম কমছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৫ মার্কিন ডলারে নিচে নেমে গেছে। যা গত মার্চ মাসে ১৩৩ ডলার ছিলো।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকায় সরকার বিলাসী পণ্যের আমদানি এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সহ জ্বালানী আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া সহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে বারবার লোডশেডিংয়েরও পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

গত ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা মাত্র পাঁচ মাসের আমদানির জন্য যথেষ্ট। এক বছর আগে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪৫.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //