এলএনজি টার্মিনাল: প্রতিদিন লোকসান দুই কোটি টাকা

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশে এর আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমদানি না করেও দুই ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা অনুসারে সরকারকে বইতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। আর এতেই প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে দুই কোটি টাকা। 

প্রতিদিন এই দুই কোটি টাকা লোকসান বর্তমানে চোখে লাগার মতো লোকসান বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, এমনিতেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। এর কোনো তোয়াক্কাই যেনো কেউ করছে না। তারমধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের পেছনে প্রতিদিন দুই কোটি টাকা গচ্চা বেশ চাপ হয়ে উঠছে সরকারের জন্য। 

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মন্তব্য করেছেন।

মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা ওই দুই এলএনজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে রূপান্তরে (রিগ্যাসিফিকেশন) টার্মিনালে সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে চুক্তি অনুসারে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে সক্ষমতা অনুযায়ী। আর তাতেই গুণতে হচ্ছে দুই কোটির লোকসান।

এলএনজি টার্মিনাল বা ফ্লটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) তরল গ্যাসকে পূর্বের গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তর করে দেশের অভ্যন্তরে তথা জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। আমদানি কমে যাওয়ায় ইউনিট দুটির ক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার না হলেও দিনে প্রায় দুই কোটি টাকা (দুই লাখ ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে।

সূত্র জানায়, ১০০ কোটি ঘনফুটের জন্য দুই এফএসআরইউর দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ প্রায় চার কোটি ২৭ লাখ টাকা (সাড়ে ৪ লাখ ডলার)। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির চার্জ দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা (দুই লাখ ৩৭ হাজার ডলার) এবং দেশীয় সামিট গ্রুপের এফএসআরইউর জন্য চার্জ দুই কোটি ৬ লাখ টাকা (দুই লাখ ১৭ হাজার ডলার)। 

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ আছে। এতে এলএনজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দুই এফএসআরইউ থেকে দিনে কম-বেশি ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে, যা সক্ষমতার অর্ধেক। তবে রিগ্যাসিফিকেশন না করলেও বাকি সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রায় দুই কোটি টাকা পাচ্ছে এফএসআরইউর উদ্যোক্তারা।

বিদ্যুতেও ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি হওয়ায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় বন্ধ থাকে। তবে চুক্তি অনুযায়ী তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। গত ১১ বছরে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে সরকারের কাছ থেকে।

ঘাটতি মেটাতে ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় বিনা টেন্ডারে দুটি কোম্পানিকে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ দেওয়া হয়। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতার এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কার্যক্রম শুরু করে। সামিটের টার্মিনাল অপারেশনে আসে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল। চালুর প্রথম দিকেও পাইপলাইন সীমাবদ্ধতায় দীর্ঘদিন পূর্ণ সক্ষমতায় গ্যাস নিতে না পারলেও দুই এফএসআরইউকে পুরো চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল পেট্রোবাংলাকে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিনা দরপত্রে সমঝোতার মাধ্যমে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছে। ফলে চার্জ নির্ধারণে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। রিগ্যাসিফিকেশন করুক বা নাই করুক পুরো চার্জ দিতেই হবে এমন শর্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারপরও চুক্তি হয়েছে। বছর বছর শত শত কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা থাকলে এমন হওয়ার সুযোগ কম ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা চুক্তিপত্র যাচাই করে রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //