ঘোষণার পরেও কমেনি তেলের দাম

ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে নৈরাজ্য কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব বাজারে ক্রমাগত দাম কমায় দেশীয় বাজারেও খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। অন্যদিকে আমদানি, উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভোজ্যতেলের ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আরো তিনমাস বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দাম কমানোর ঘোষণার পাঁচদিন পেরোলেও বাড়তি দামেই তেল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে চিনিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ও পাম তেলে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। চিনির বাড়তি দাম কার্যকর করা হলেও তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজের বেলায় ১৬ আনা পরের বেলায় ১ কড়িও না। ব্যবসায়ীদের অবস্থা অনেকটা এমনই হয়ে গেছে। তারা বোঝেন শুধু টাকা।

সরেজসিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখার পর জানা গেছে, চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার ১২৫ টাকায় করা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম পুনর্নিধারণের এ ঘোষণার পর বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে সয়াবিন তেল আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকায় এবং খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এর আগেই প্রতি লিটার সয়াবিনে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা আসার পর তা বাস্তবায়নে গড়িমসি আর দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সাথে সাথে কার্যকরের যে চিত্রটি এর আগে বহুবার দেখা গিয়েছে, তা এবার একসাথে দেখা গেল দুটি ভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঘোষণা দিলেও কম দামের বোতল ও প্যাকেটজাত ভোজ্য তেল কোম্পানিগুলো এখনো সরবরাহ শুরু করেনি। তাই বাড়তি দামে কেনা ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে গতকাল শনিবার (৮ অক্টোবর) পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছিল আবার কমতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী কিছু কৌশলগত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তেলের দামও বেড়েছিল, এখন কমেছে। কারণ, এক কোটি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে কম দমে বিক্রি হচ্ছে চাল, তেল। চার কোটি মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত করতে পেরেছি। ফলে দাম কমে এসেছে। শুধু কমেনি, ভালো কমেছে।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন দাম কমিয়ে এক লিটার তেলের মূল্য নির্ধারণ করে ১৭৮ টাকা। যা আগে ছিল ১৯২ টাকা। অন্যদিকে পাঁচ লিটার বোতলে ৬৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৯৪৫ টাকা। অর্থাৎ বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিনে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা কমেছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৮ টাকা।

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের দোকানদার শরিফ জানান, বোলতজাত ১ লিটার তেল তিনি ১৯০-১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ৫ লিটারের তেল বিক্রি করছেন ৯৪৫ টাকায়। আগের দামেই তেল বিক্রি করছি। কারণ নতুন মূল্যের তেল এখনো কোম্পানি দিয়ে যায়নি। কমানো দামে তেল দিলে আমরাও তেলের দাম কমাতে পারবো। আরেক দোকানি তাওহীদ জানান, নতুন দামের খবর শুনেছি কিন্তু এর প্রভাব নাই। কেননা কোম্পানিগুলো এখনো পুরনো দামে তেল বিক্রি করছে।

কাওরান বাজারের বিক্রেতা ওমর ফারুক জানান, তিনি সয়াবিন তেলের এক লিটার বোতল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় এবং দুই লিটারের বোতল ৩৮০ টাকা ও পাঁচ লিটার তেলের বোতল ৯৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। দাম তো ১৭৪ টাকা হওয়ার কথা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাম কমালেই তো আর সঙ্গে সঙ্গে সেই মাল বাজারে চলে আসে না। আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আমরা কম দামে পেলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করবো।

বাজারে পণ্য বিক্রির সময়ে সিটি গ্রুপের একজন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভের (এসআর) কাছে বাড়তি দাম নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে চাননি।

মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান জানান, নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে এখনো আসেনি। তবে এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সারা দেশে নতুন দামের তেল পাওয়া যাবে।

এসিআই লজিস্টিকসের সুপার শপ স্বপ্নের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মিলু বলেন, আমরা নতুন তেল অর্ডার দিয়েছি। অপেক্ষায় আছি কোম্পানিগুলো কবে আমাদের তা সরবরাহ করবে। আমাদের গ্রাহকরা নতুন দামের পণ্য চাচ্ছে। তাদের চাহিদা মেটাতে আশা করছি খুব দ্রুতই নতুন দামে তেল বিক্রি করা সম্ভব হবে।

ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ঘোষিত নতুন দামে ভোজ্যতেল বোতলজাত শুরু হয়েছে। বাজারে থাকা বোতলগুলোর গায়েও নতুন দামের লেবেল লাগানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন বোতলজাত তেল বাজারে পৌঁছাতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।

এদিকে গত ৬ অক্টোবর পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেশিরভাগ দোকানে পাম তেল বিক্রি না হলেও যেসব দোকানে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে তারা আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা পুরনো দামে তেল পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

ওদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানানোর পরও বাজারে বর্ধিত দরের চিনি আসতে সময় লাগেনি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বেঁধে দেয়া দরের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। বাজারে দাম বাড়ানোর পরদিন এই বাজারে চিনির প্যাকেটের গায়ে কেজিপ্রতি দর ৯৫ টাকা ছাপা থাকা দেখার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, নতুন দরের পণ্য বাজারে আসতে ৭ দিন সময় লাগার বিষয়টি সঠিক নয়। আর খোলা চিনির যে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে, সে দরে বিক্রি হচ্ছে না। কোথাও দাম রাখা হচ্ছে ৯২ টাকা, কোথাও ৯৩ টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //