সয়াবিন তেল মজুদ করে রাখছে ব্যবসায়ীরা

লিটারে ১৫ টাকা দাম  বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার পরের দিন থেকেই বাজারে উধাও সয়াবিন তেল। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে অনেকেই মজুদ করে রাখছেন তেল।

শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর আজমপুরে বাজার করতে আসা রোকসানা বেগম বলেন, ‘কয়েক দোকান ঘুরে বাড়তি দামে সয়াবিন তেল কিনেছি। দোকানে প্রথমে তেল চাইলে বলে নেই। পরে বলে কয়েক বোতল আছে দাম বেশি পড়বে। সরকার দাম বাড়ায়নি আপনি কেন বেশি দাম রাখবেন জানতে চাইলে দোকানি আমাকে বলে বাড়তি দামে নিলে নেন না নিলে যান। অনেক কাস্টমার আছে বেশি দামে নেয়ার। পরে বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়েছে।’

প্রায় একই কথা বলেন শফিক রহমান। তিনি বলেন, গতকালকে দেখলাম সয়াবিন আজকে দেখি নাই। একদিনে কি সব হাওয়া হয়ে গেল? কিছু দোকানে বাড়তি দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে। এ দেশে দাম বৃদ্ধির গুজব উঠলেও বাজারে সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়ে যায়। আর দাম কমানোর কয়েক মাস পরেও বাজারে দাম কমে না। তখন বলে নতুন দামের পণ্য বাজারে আসেনি। দেখেন চিনির দাম সরকার সেই কবে নির্ধারণ করে দিয়েছে বাজারে এখনো সরকারি দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আর সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন দাম বেড়ে গেল!

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, তেলের দাম বাড়বে বলে অনেক দোকানদার তেল মজুদ করে রেখেছে। যখন দাম বাড়বে তখন বিক্রি করবে। আবার অনেকে এখনই বেশি দাম রাখছে। এছাড়া মিল থেকেও তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের জন্য কিছু অতিরিক্ত লাভ কে করতে না চায়? 

কারওয়ান বাজারের আবদুর রব স্টোরের বিক্রয়কর্মী বলেন, গতকালকে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ক্রেতারা বেশি করে সয়াবিন তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যার দুই কেজি লাগে সে পাঁচ কেজি নিচ্ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো তাদের চাহিদা থেকে বেশি নিচ্ছে দাম বেড়ে যাবে বলে। যার কারণে বেশিরভাগ তেল বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক দোকানে তেল নেই।

মিল থেকে সয়াবিন তেল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আপনারা চিনেন না, তারা কি করে? আপনারাই তো এর আগে বের করলেন ব্যবসায়ীরা মিল থেকে তেল নিয়ে কোথায় কিভাবে রাখে, বিক্রি করে। আমরা সরবরাহ কমাইনি। টাকা নিয়ে মিলে আসলে আমরা সবাইকে সয়াবিন তেল দিচ্ছি। আমরা প্রতিদিন কি পরিমাণ বিক্রি করছি তা রেগুলেটরি অথরিটিকে প্রতিদিন আপডেট দিচ্ছি। আমাদের কাছে রশিদ আছে। সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই।’

এর আগে গত বুধবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে অস্বাভাবিক অবমূল্যায়ন হয়েছে টাকার। এ কারণে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। বিষয়টি নিয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৫৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই বিষয়টি পরীক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হলো।

নতুন দাম কার্যকর হলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৭৩ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে ১৯৩ টাকা।

এর আগে ৩ অক্টোবর বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলে ১৭ টাকা কমিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই দামেই এখন বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //