কারসাজি করে তেল-চিনির দাম বাড়ানোর চেষ্টা

অফিস শেষে গোলাম মোস্তফা বাসায় ফেরার পথে পাঁচ লিটারের দুই বোতল সয়াবিন কিনতে চেয়েছিলেন। তবে খিলগাঁও রেলগেট বাজারের যেই মুদি দোকান থেকে তিনি সবসময় সদাই কিনে থাকেন সেখানে এক লিটারের ছয়টি সয়াবিন তেলের বোতল ছাড়া আর কোনো তেলের বোতল ছিলো না। পরে বাধ্য হয়ে এক লিটার করে তিন লিটার সয়াবিন তেল কিনে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বাসায় ফেরেন। চাইলে আরো দুই লিটার কিনতে পারতেন। দোকানি দিতেও চেয়েছিলো। সেসময় মনে মনে অন্য মানুষ কি কিনবে তিনি সব কিনে ফেললে সেই কথা ভেবে আর কেনেননি। চিনিরও এক অবস্থা। রেলগেট বাজারের কোথাও লাল চিনি পেলেন না ঢাকার এই স্থানীয় ব্যক্তি।

রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ তলানিতে নেমেছে। গতকাল সরেজিমনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে গোলাম মোস্তফাসহ আরো অনেক নগরবাসীর সাথে কথা হয় সাম্প্রতিক দেশকালের এই প্রতিবেদকের সাথে।

জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ থাকলেও দাম বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭০ এবং পাম অয়েল ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে, এখনও বেশিরভাগ জায়গায় ফেরেনি প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি মিললেও বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ফের পুরনো কৌশলে হাঁটছে ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো। তারা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গত রমজান মাসেও এ ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিল। দাম বাড়ার পর তেলের আর অভাব দেখা যায়নি।

গত ৩ অক্টোবর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৮, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৮০ এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১ নভেম্বর আবারো সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন ভোজ্যতেল আমদানিকারীরা। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে এখনো সায় দেয়নি। গত ৬ অক্টোবর প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১২৫ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা দরে। যদিও এ দফায় দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে পাম অয়েলের বিষয়ে উল্লেখ করেননি ব্যবসায়ীরা।

মালিবাগ বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রয়কর্মী আল-আমিন সরকার বলেন, চাহিদাপত্র নিয়েও কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না কয়েক দিন ধরে। হয়তো দাম বাড়ানোর পর তারা বাজারে তেল দেবে। 

তেজকুনিপাড়ার সুমা জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. শুভ বলেন, দু-তিন দিন ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম নিচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা। ফলে ১৭০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। 

মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. আল-আমিন বলেন, দু-একটি কোম্পানি অল্প পরিমাণে তেল দিলেও সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে হয়। মসলা, চা পাতা বা সরিষা তেল না নিলে তেল দিচ্ছে না তারা।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা দাম প্রস্তাব দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বাজারে জোগান কমার কথা নয়। তবে কেউ যদি অবৈধ মজুত করে থাকে তাহলে সে ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //