রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দিল পশ্চিমারা

ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর অর্থায়ন ক্ষমতা সীমিত করার লক্ষ্যে রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে আমদানি করা জ্বালানি তেলের উপর একটি মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছে গ্রুপ অব সেভেন বা জি-৭।

অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, তাদের উৎপাদন যদি কমাতেও হয় তারা এই পদক্ষেপ মেনে চলবে না।

কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোট জি-৭, সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অস্ট্রেলিয়ার সম্মতিতে ৫ ডিসেম্বর মূল্যসীমাটি কার্যকর হয়েছে। ইইউয়ের সদস্যরা পোল্যান্ডের প্রতিরোধ কাটিয়ে ওঠার পর জি-৭ ভুক্ত দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া রাশিয়া থেকে সমুদ্র পথে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেল মূল্য ৬০ ডলারে সম্মত হয়েছে। বেঁধে দেওয়া মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে কম রাখার দাবিতে পোল্যান্ড প্রস্তাবিত মূল্যের বিরোধিতা করেছিল।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই মূল্য নির্ধারণকে বলেছেন, ‘বিশ্ব এই স্তরের মূল্যসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তাদের দুর্বলতা দেখিয়েছে।’ অন্যদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, এটি স্পষ্টত একটি হস্তক্ষেপ, যা মুক্ত বাণিজ্যের নিয়মের পরিপন্থী।

রাশিয়ার তেল, গ্যাস, কয়লা ও পারমাণবিক শক্তির দায়িত্বে থাকা নোভাক বলেছেন, ‘যে মূল্যস্তরই নির্ধারণ করা হোক না কেন, আমরা মূল্যসীমার প্রয়োগ নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। কারণ এই ধরনের হস্তক্ষেপ বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে। এমনকি আমাদের উৎপাদন যদি কিছুটা কমাতেও হয়, আমরা কেবল সেই দেশগুলোতে তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করব, যারা বাজার পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে।’

চুক্তি অনুযায়ী, ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের শর্তে জি-৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মালিকানাধীন কার্গো ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষের কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে পারবে মস্কো। একই সঙ্গে এসব দেশের বীমা কোম্পানি ও ক্রেডিট প্রতিষ্ঠানগুলো মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনীতির আকার ইতোমধ্যেই ছোট হয়েছে। আর মূল্য বেঁধে দেওয়ার এই পদক্ষেপ অবিলম্বে দেশটির আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসকে জোরালো ধাক্কা দেবে।

ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানান হয়েছে, প্রতি দুই মাস পরপর রুশ জ্বালানি তেলের এই দাম মূল্যায়ন করা হবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে পশ্চিমারা। কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লাইয়েন বলেছেন, জি-৭, ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা রাশিয়ার রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে এবং এতে ইউক্রেনে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমবে। 

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং ইউক্রেন সরকারকে কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠিয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অবশ্য বলেছিলেন, পশ্চিমারা যদি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনায় সম্মত হয় তাহলে রাশিয়ার নিরাপত্তাও বিবেচনা করা উচিত। এর সপ্তাহান্তে তিনি ইউক্রেন ও তার বাল্টিক মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কির সহযোগী মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছিলেন, বিশ্বের থেকে রাশিয়ার নয়, রাশিয়ার কাছ থেকেই বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দরকার।

পরিকল্পিত ব্ল্যাকআউট

রাশিয়া ইউক্রেনে অক্টোবরের শুরু থেকে বিদ্যুতের অবকাঠামোতে ঝাঁকুনি দিচ্ছে, যার ফলে ব্ল্যাকআউট হয়েছে এবং তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। রাশিয়া বলছে, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে নয়, হামলাগুলো মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধ করার ক্ষমতা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, এই হামলাগুলো যুদ্ধাপরাধ। রবিবার একটি ভিডিও ভাষণে নাগরিকদের শীত প্রতিরোধে ধৈর্যশীল ও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। 

ইউক্রেনের বৃহত্তম বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিটিইকে জানিয়েছে যে ইউক্রেনের দক্ষিণ এবং পূর্বে ওডেসা, দনেৎস্ক এবং দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের জন্য ব্ল্যাকআউটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। গত মাসে রুশ বাহিনী চলে যাওয়ার পর থেকে দক্ষিণের শহর খেরসন মূলত বিদ্যুৎবিহীন। আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, এর আগে ৮৫ শতাংশ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। তারা রাশিয়ার নতুন অস্ত্র তৈরি এবং মেরামত করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, পাশাপাশি এর উপাদান পরিবহনে বাধা দিচ্ছে।

রাশিয়ার ক্রমাগত আগ্রাসনের ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব স্পষ্ট; কারণ যুদ্ধ বৈশ্বিক পণ্যের বাজারকে ব্যাহত করেছে, বিশেষ করে কৃষিখাদ্য পণ্য ও জ্বালানি শক্তি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিশ্চিত করে চলেছে যে এর নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়া থেকে তৃতীয় দেশে শক্তি এবং কৃষিখাদ্য রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //