গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি নিয়ে ভয়াবহ দুঃসংবাদ

করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার জায়গা ছিল গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানিখাত। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত সংকটজনক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি গত ছয় মাসে মাত্রাতিরিক্ত হারে হ্রাস পেয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি মারাত্মক ভয়াবহ দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন অর্থীতিবিদরা।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে চার দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ ডলার সমান ১০৬ টাকা হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। যা এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। সাদা চোখে আয়ের দিক থেকে অগ্রগতি হয়েছে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে আয়ের গতি নিম্নগামী। কেননা, অর্থের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১০৭ কোটি টাকা হলেও এর আগের বছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইইউ থেকে আয় হয়েছে ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই তালিকায় যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে পাওয়া দুই দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ পরবর্তীতে ইইউ থেকে ইউকে আলাদা হয়ে গেছে। এ কারণে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ প্রতীয়মান।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় মাস আগেও আয়ের পরিমাণ পরিমাণ ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে, তখন এই তালিকায় যুক্তরাজ্য থেকে আসা দুই দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এসব তথ্য থেকে বোঝা যায়, চলমান যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি থেকে আয় আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু, প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। যা মোটেই সুখকর কোনো সংবাদ নয়।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির বিধিনিষেধ শিথিলের পর ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে দুর্দান্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যে প্রভাব পড়েছে, তা এখনো কাটানো যায়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) এক সদস্য বলেন, পশ্চিমা অর্থনীতিতে উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির কারণে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার কম করেছে। সেই কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন নাও হতে পারে।

ইইউর পরিসংখ্যান বিষয়ক অফিস ইউরোস্ট্যাটের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইউরো অঞ্চলের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক দুই শতাংশ হবে বলে আশা করা হয়েছিল, যা নভেম্বরে ১০ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে গেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চরম আবহাওয়া, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সামনে কি আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //