ফেব্রুয়ারিতে ফের বাড়বে বিদ্যুতের দাম

গত ডিসেম্বরে বাড়ানো হয়েছে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। আর চলতি জানুয়ারিতে বেড়েছে গ্রাহক পর্যায়ের মূল্যহার। তবে আবারো বাড়তে যাচ্ছে বিদ্যুতের দাম।

এবার পাইকারি ও গ্রাহক উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের বাড়ানো হবে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগে এরই মধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সরকারের নির্বাহী আদেশে পাইকারিতে ৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। যার ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়বে ৫ শতাংশ। 

জানা যায়, ডিসেম্বরে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্যদিকে জানুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে পাঁচ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়তে যাচ্ছে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম।

এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১৭৯ শতাংশ। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে ৩৬ শতাংশের বেশি।

এজন্য পাইকারি দাম প্রতি ইউনিটে ৫০ পয়সা (৮.০৩ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। পাইকারিতে বাড়লে গ্রাহক পর্যায়েও ৫ শতাংশ বাড়বে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থনীতিবিদ ও খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এভাবে লাগাতার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষ, উদ্যোক্তা কারো জন্যই সুখকর নয়। এতে সবার খরচ বাড়বে, উৎপাদন কমবে। যা অর্থনীতির জন্য শুভ হবে না।

সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ায় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এ সময় ইউনিট প্রতি গড় পাইকারি দাম দাঁড়ায় ৬ টাকা ২০ পয়সা। পিডিবির প্রস্তাব অনুসারে দাম বাড়লে প্রতি ইউনিটের দর হবে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এর পর ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশেই গ্যাসের দাম বাড়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসের দাম এক লাফে ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ১৪ টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং ফার্নেস অয়েলের শুল্ক্ক সুবিধা প্রত্যাহার করায় পিডিবির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সরবরাহ খরচ ছিল ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। এই অর্থবছর তা বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ধরে গত নভেম্বরে দাম বাড়ার পর পাইকারি বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য এখন ৬ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান হচ্ছে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা।

এর মধ্যে গ্যাসের দর ১৭৯ শতাংশ বাড়ায় বছরে পিডিবির ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। ফলে এ খাতে বাড়বে সরকারের ভর্তুকিও। ভর্তুকি কমাতে পিডিবি প্রতি ইউনিটে পাইকারি দর গড়ে ৫০ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

কোন কোম্পানির কত দাম

প্রস্তাব অনুযায়ী, পিডিবির চার বিতরণ অঞ্চল- পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিকে (নেসকো) বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর ২৩০ কেভি (কিলোভোল্ট) লাইনে প্রতি ইউনিটের পাইকারি দাম ৭.৬০৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১০৪০ টাকা এবং ১৩২ কেভিতে ৭.৬৩৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১৩৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। ৩৩ কেভি লাইনে পিডিবির বিতরণ অঞ্চলের দাম ৬.৭৮৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.২৮৯৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

৩৩ কেভিতে আরইবির জন্য ৫.৩৯২৫ টাকা থেকে ৫.৮৯২ টাকা, ডিপিডিসির জন্য ৭.৭২ টাকা থেকে ৮.২২ টাকা, ডেসকোর ৭.৭৪৮০ টাকা থেকে ৮.২৪৮০ টাকা, ওজোপাডিকোর ৬.৬২৭৫ টাকা থেকে ৭.১২৭৫ টাকা এবং নেসকোর ৬.২০৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭০৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাইকারি দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের খুচরা দর ৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে। তবে এজন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোনো প্রস্তাব দিতে হবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //