‘টিকে থাকাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে’

চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতায় টিকে থাকতে জ্বালানিতে ভর্তুকি চান দেশের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, টিকে থাকাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা, নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো ও চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাণিজ্যে টিকে থাকতে জ্বালানির মূল্য এখনই সমন্বয় না করে আরও কিছুদিন ভর্তুকি দিতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও মুক্ত আলোচনায় সংগঠনটির নেতারা এসব কথা তুলে ধরেন। 

এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, মহাসচিব ফারুক আহমদ প্রমুখ।

এমসিসিআই সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরামর্শে সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে জ্বালানিতে কোনো ভর্তুকি দেবে না। আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে প্রতি মাসে না হলেও প্রান্তিকে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু এখনও বিশ্বে মহামারি শেষ হয়নি। চলমান আছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ অবস্থায় জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে নিলে দেশের ব্যবসায়ীরা চাপে পড়বে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা কমে যাবে। তাই আমরা চাচ্ছি এখন অর্থাৎ এ বছর জ্বালানির দাম সমন্বয় না করে ভর্তুকি চালু রাখা।

তিনি জানান, আগামী চার বছর পর যখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ করবে তখন এমনিতেই বাণিজ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা তুলে নেওয়া হবে, তখন ইচ্ছে করলেই ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা যাবে না। তখন আমাদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে নীতি সহায়তা দিতে হবে। 

কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে গত বছর থেকে দেশে তীব্র আকারে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়ে রিজার্ভ থেকে খরচ করেছে সরকার।

ব্যাংক জরুরি মুহূর্তে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু আমরা আগের মতো সহজে এলসি খুলতে পারছি না। কারণ প্রয়োজনীয় ডলার সাপোর্ট দিতে পারছে না। তাই এখনও কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে অনেক সময় লাগছে। 

এনবিআরের হয়রানি প্রসঙ্গে এমসিসিআই নেতা বলেন, মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব কর্মকর্তা একজন ব্যবসায়ীর ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য সরকার ও এনবিআরের যে সদিচ্ছা রয়েছে তা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আর থাকে না। তাই আমরা সবসময় রাজস্ব খাতে হয়রানি দূর করতে অটোমেশন চালুর পরামর্শ দিয়ে আসছি। কিন্তু এ দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এটা এখনও চালু হয়নি। তাই ভোগান্তিও কমেনি।

এমসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, করোনার মধ্যেও আমরা বেশ কয়েকটি সূচকে উন্নতি করেছি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতিমধ্যে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এই অর্থবছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হবে।

তিনি জানান, মহামারি অন্যান্য দেশে যেমন ক্ষতি করেছে আমাদের অর্থনীতিতে তেমন আঘাত হানতে পারেনি। এর মূল কারণ সরকারের সঠিক পদক্ষেপ ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ। এ কারণে আমাদের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে রপ্তানি আয়ও ভালো হয়েছে। সরকার যদি আমাদের সঠিক নিয়মে নীতি সহায়তা দেয় তাহলে আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার হবে।

তৈরি পোশাক নিয়ে তিনি বলেন, দেশের রফতানি খাতে রাজস্ব করে বাড়াচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া বর্তমানে দেশের পোশাক খাতে প্রতি মাসে ৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে। তবে রফতানির ক্ষেত্রে শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করা উচিত না। রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি বহুমুখীকরণে বিকল্প নেই বলেও তিনি জানান। 

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক খাতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপিদের বিষয়ে এমসিসিআইয়ের অবস্থা কী জানতে চাইলে সংগঠনটির সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম জানান, খেলাপিদের পক্ষে আমরা নেই। কীভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায় এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছি। খেলাপি ঋণের মওকুফ আমরা চাই না।

এমসিসিআইর মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর মজুরি নির্ধারণ হয়। পাঁচ বছর অন্তর তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী বোর্ডও যথারীতি হবে। বোর্ডে সব দিক বিশ্লেষণ করে মজুরি নির্ধারণ করবে। তবে তৈরি পোশাক দেশের বড় খাত। এর পেছনে উঁচুমহলের হাত থাকে। তৈরি পোশাক শিল্পের সক্ষমতা ও শ্রমিকদের জীবন নির্বাহের খরচ বৃদ্ধিসহ সার্বিক দিকে বিবেচনা করে নিশ্চয়ই গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণ হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //