লোকসান দিয়েই ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ইলিশ

দেশে উৎপাদিত ইলিশের সিংহভাগ আসছে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী এবং সাগর থেকে। এর পরও বরিশালের বাজারে মিলছে না ইলিশ। যাও মিলছে তা কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। তার মধ্যেই আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বরিশাল থেকে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। তাও আবার কেজিতে অন্তত তিনশ টাকা লোকসান দিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অর্থাৎ ১ অক্টোবর পর্যন্ত বরিশাল থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে ৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এখনো ১৯০ টন ইলিশ বরিশাল থেকেই রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ না হলেও কম মূল্যে ইলিশ ভারতে রপ্তানির খবরে অনেকটা ক্ষোভ বিরাজ করছে বরিশালবাসীর মধ্যে।

জানা গেছে, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রপ্তানির দায়িত্ব পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৯টি প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬টি এবং খুলনার ১টি প্রতিষ্ঠান। তবে খুলনার যে প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকও বরিশালের বাসিন্দা।

সে হিসেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ছয়টি প্রতিষ্ঠান বরিশাল থেকে ৩০০ টন ইলিশ রপ্তানি করতে পারবেন। এরই মধ্যে বরিশালের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৬০ টন ইলিশ রপ্তানি করেছে।

বরিশালের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতি কেজি ইলিশ ১০ ডলার দরে রপ্তানি করা হয়েছে। সে হিসেবে বরিশালে বর্তমান ইলিশের বাজার দরের থেকে অন্তত তিনশ টাকা লোকসান দিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

তারা বলেন, বর্তমানে বরিশালের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি মূল্য প্রায় ১৪০০ টাকা। অথচ রপ্তানিকারকরা ১১০০ টাকা কেজি দরে ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতি কেজিতে ৩০০ টাকা লোকসান দিচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। যদিও গত কয়েক দিনের তুলনায় ১ অক্টোবর ইলিশের দাম প্রতি মণে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাহিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, গত মাসে ইলিশের যে দাম ছিল অক্টোবরের শুরুতেই সেই মাছের দাম মণপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে।

তবে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ অক্টোবরও বাজারে প্রতি কেজি এলসি সাইজের ইলিশ দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মূল্য বেশি হওয়ায় ভরা মৌসুমেও ইলিশ জুটছে না সাধারণ মানুষের ভাগ্যে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী বলেছেন, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ভারতে নিজস্ব লোক আছে। তারা সেখানে বাড়তি দামে ইলিশ বিক্রি করেন। ভারতের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা লাভ করেন। যে কারণে দেশের বাজারে বিক্রি থেকে বিদেশে রপ্তানির দিকে দৃষ্টি বেশি রপ্তানিকারকদের।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাহিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি বলেন, সব রপ্তানিকারকেরই নিজস্ব লোক আছে কলকাতায়। তবে পাইকারি বাজারে বিক্রির বিষয়টি আমরাই দেখি। কম মূল্যে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, বরিশালে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি দরে ইলিশ বিক্রি হয়। যেমন এলসি সাইজ সর্বশেষ ৪৮ হাজার টাকায় কেনা। আর কেজি সাইজের ইলিশ ৫৩ হাজার টাকায় কেনা। তাছাড়া ছোট সাইজের সাইজের ইলিশ বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি নয়। তবে আমরা ইলিশ গড়ে কিনে গড়ে পাঠাই। যে কারণে এলসি রেট ১১০০ টাকা পড়ে।

বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের সিংহভাগ ইলিশ উৎপাদন হয় বরিশালের সাগর এবং নদ-নদীতে। অথচ ভরা মৌসুমেও এই অঞ্চলে ইলিশের মূল্য চড়া। অথচ কম দামে ইলিশ রপ্তানির বিষয়টি দুঃখজনক। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //