এক বছরে ডেসকোর লোকসান সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা

ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা। 

দুই যুগেরও বেশি সময় আগে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরুর পর যাত্রা শুরুর পর আর কখনও এই অভিজ্ঞতা হয়নি কোম্পানিটির।

এই পরিস্থিতির জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন আর বেশি দরে কিনে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রিকে দায়ী করেছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী।

তার তথ্য বলছে, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বেচে তাদের লোকসান হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। আর টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ক্ষতি হয়েছে ৪২৮ কোটি টাকা।

আজ রবিবার (১৫ অক্টোবর) কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করে। বিপুল পরিমাণ লোকসান দিলেও শেয়ার প্রতি এক টাকা হিসাবে ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

শেষ তিন মাসে বড় ঘাটতি

ঘোষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ১৩ টাকা ৬১ পয়সা।

৩৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪টি। এই হিসাবে কোম্পানিটি এই অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৫৪১ কোটি ৯ লাখ ২৫ হাজার ৩২ টাকা।

এই লোকসানের পুরোটাই হয়েছে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নয় মাসে।

এই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ২৯ পয়সা বা সাড়ে ১১ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করে। এরপর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ৮ পয়সা হিসাবে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার মতো লোকসান দেয়।

তারপরেও অর্ধবার্ষিক হিসাবে কোম্পানিটি মুনাফাতেই ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ১৪৫ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লোকসান দেয় কোম্পানিটি।

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে লোকসান হয় ৪০৪ কোটি ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মতো।

সিংহভাগ লোকসান টাকার অবমূল্যায়নে

এত লোকসান কেন, এই প্রশ্নে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলেন, এই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বাড়িয়েছিল ২৮ শতাংশ। কিন্তু আমরা খুচরায় আমরা বাড়াতে পেরেছি ১৫ শতাংশ। দামের এই পার্থক্য আমাদেরকে লোকসানে নিয়ে গেছে।

ডেসকো এমডি বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে যেসব ঋণ নেওয়া আছে সেগুলো তো ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঋণ পরিশোধের খরচও বেড়ে গেছে। আমরা টাকায় আয় করি আর ডলারে ঋণ পরিশোধ করি। এখানেও একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, যখন ঋণ নেওয়া হয়েছিল তখন ডলারের দাম ছিল ৮২ টাকা। এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে এক ডলার সমান ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়। কেবল ডলারের বাড়তি দরের জন্য বাড়তি ৪২৮ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।

টাকার অবমূল্যায়ন কেবল ডেসকো না, চাপে ফেলেছে সরকারি সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ারগ্রিডকেও। গত মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরের নয় মাসে কোম্পানিটি ৩৩২ কোটি ১৩ লাখ টাকারও বেশি লোকসান দিয়েছে একই কারণে। অর্থবছর শেষে এই লোকসানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই হিসাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ডেসকোর মতো তাদেরও লোকসান শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে।

বর্তমানে মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কল্যাণপুর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বারিধারা, বাড্ডা, টঙ্গী এবং পূর্বাচলসহ ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ডেসকোর আওতাভূক্ত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //