গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি: মালিক পক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

মজুরি বোর্ডের ৪র্থ সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মাত্র ১০৪০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে যা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন এবং শ্রমিকদের চরম দারিদ্রতায় আটকে রেখে সস্তা শ্রমকে আরো সস্তায় লুট অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এলায়েন্স বাংলাদেশের নেতারা।

আজ সোমবার (২৩ অক্টোবর) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতারা এ তথ্য জানায়।

নেতারা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ছিল শ্রমিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। গত পাঁচ বছরে ৬ শতাংশের বেশি হারে গড় মূল্যস্ফীতি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো কোনো পণ্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি ৫০ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। ফলে শ্রমিকদের অপুষ্টিকে সঙ্গী করে প্রায় অর্ধাহার-অনাহারে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় কেবল গত নয় মাসে ২০১৮ সালের তুলনায় গার্মেন্টস মালিকদের বাড়তি আয় হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর শ্রমিকদের ২০১৮ সালে প্রাপ্ত মজুরির সমান ক্রয়ক্ষমতা আজকের বাজারে অর্জন করতে হলে মজুরি হতে হবে ১২ হাজার টাকার বেশি। সেই অবস্থায় মজুরি বোর্ডের ৪র্থ সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মাত্র ১০৪০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে যা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন এবং শ্রমিকদের চরম দারিদ্রতায় আটকে রেখে সস্তা শ্রমকে আরো সস্তায় লুট অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা।

শ্রমিক নেতা আলাউদ্দিন মিয়া, নঈমুল আহসান জুয়েল, আমিরুল হক আমিন, আবুল হোসেন, তৌহিদুর রহমান, আহসান হাবিব বুলবুল, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, লাভলি ইয়াসমিন, বজলুর রহমান, রফিকুল ইসলাম সুজন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরিত এক বিবৃতিতে গার্মেন্টস মালিকদের এই অমানবিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের প্রধান ভিত্তি হলো মানবসম্পদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপসমুহ বলছে পুষ্টিহীনতাজনিত কারণে বাংলাদেশে ১৬.২ শতাংশ শিশু মৃত্যুর বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। গার্মেন্টস মালিকদের মজুরি প্রস্তাব শ্রমিকদের পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তার, শ্রম বাজারে সুস্থ শ্রম সরবরাহ অব্যাহত রাখার, এস.ডি.জি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে না।

তারা বলেন, মালিক পক্ষ মজুরি প্রস্তাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ইসরাইল- হামাস যুদ্ধের যে অজুহাত দেখিয়েছেন তা খণ্ডন করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কোনো বাজার নয় তাই ইসরাইল হামাস যুদ্ধের প্রভাব তৈরি পোশাক শিল্পে পরার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবিকৃত ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি পরিশোধ করতে যে ব্যয়বৃদ্ধি হবে তা উৎপাদন একক প্রতি মাত্র কয়েক সেন্ট মূল্যবৃদ্ধি করবে। প্রকৃতপক্ষে মজুরি বৃদ্ধি ইস্যুতে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে ন্যায্যতার আলোচনাকে আড়াল করার অপকৌশল হিসাবে গার্মেন্টস মালিক পক্ষ মজুরি বোর্ডে এইরুপ নির্লজ্জ প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সকল সংগঠন যখন শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি কমপক্ষে ২৩ হাজার টাকা দাবি করছে সেই সময় মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির ২০৩৯৩ টাকার মজুরি প্রস্তাব শ্রমিকদের হতাশ করেছে।

নেতৃবৃন্দ, মজুরি নির্ধারণে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অপকৌশলের ব্যবহার বন্ধ করে অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কমপক্ষে ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার আহ্বান জানান এবং অপকৌশলের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় মালিকপক্ষকে বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //