রাজনৈতিক অস্থিরতা

অর্থনৈতিক ঝুঁকি প্রকট হওয়ার আশঙ্কা

চলমান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট যুক্ত হলে শিল্পোৎপাদন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ ব্যাহত হলে বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ার পাশাপাশি শিল্পোৎপাদনও ব্যাহত হবে। সংকট ঘনীভূত হলে বৈশ্বিক ক্রেতারাও বিকল্প উৎস খুঁজবেন। চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কর্মসূচি না নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।  

গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) আজ রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি নিয়ে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, এমসিসিআইয়ের নেতাদের মতামত জানতে চাইলে তারা তাদের এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানান চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স আয় কমে যাওয়া, বিনিয়োগে ধীরগতির মত কঠিন সমস্যা রয়েছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের মত আন্তর্জাতিক সংকটময় পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে। 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ভরশীল। বর্তমানে অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না। কাঁচামালের অভাবে অনেক কারখানা পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারছে না। এমন সময়ে নতুন কোনো অস্থিরতা দেখা দিলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কারণ সাম্প্রতিক সময়ের কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। 

মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির(এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যার যার জায়গা থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার ফলে করোনা মহামারিকে বাংলাদেশ ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতিসহ নানান চ্যালেঞ্জ এসেছে অর্থনীতিতে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির ফলে অস্থিরতা দেখা দিলে অর্থনীতিতে তা আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। 

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের অবকাঠামোখাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। সবাই ভাবছেন, বাংলাদেশ আগামীতে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হবে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করছেন একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য। এরকম সময়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা কাম্য নয়। 

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা কমছে। এরমধ্যে দেশের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে রপ্তানিমুখী শিল্প খুবই সংকটে পড়বে। এরকম সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। অস্থিরতা হলে ক্রেতারা বিকল্প খুঁজবেন। অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিনও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বস্ত্র খাতসহ অন্যান্য শিল্প গভীর সংকটে আছে। প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম সময়ে কোনো ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি মারা যাবে। 

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু নির্বাচন চান। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি নেবে, সেটাতে ব্যবসায়ীদের সমর্থন রয়েছে। তবে কোনো ধরনের অস্থিরতা, সহিংসতা হলে সেটা সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা বাংলাদেশের ব্যর্থতা; বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের। নির্বাচন এলেই এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যার খেসারত দিতে হয় পুরো দেশকে। এবারও সংঘাত দেখা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই সংঘাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, সংঘাত চরম আকার নিলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব হবে ব্যাপক। কারণ এবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ দুর্বল, বৈশ্বিক অবস্থাও পক্ষে নেই।

তার মতে, যেকোনোভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই হতে হবে। নতুবা রাজনৈতিক দল, দেশ সবাই হারবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি আর সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //