পর্যটন খাত

হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে দেশের পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় ও সময়মতো চলাচল না করায় নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করেছেন অনেক পর্যটক। 

এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় অনেকে বুকিং স্থগিত করেছেন। ফলে ভরা মৌসুমে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান,‌ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, কুয়াকাটা ও সুন্দরবনসহ পর্যটন এলাকা। বিপাকে পড়েছেন ট্যুর অপারেটররা। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, গত এক সপ্তাহে শুধু কক্সবাজারেই ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। আর সারা দেশে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

এদিকে পরিস্থিতিতে বেশি ছাড়ের পাশাপাশি নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও পর্যটনের ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেল-রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এখন গ্রাহকহীন। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরও বাড়বে।

জানা যায়, নেতাকর্মীদের হত্যা-গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি সারা দেশে তিন দিনের অবরোধ পালন করে। এরপর আরও কয়েক দফা হরতাল-অবরোধ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবারও দলটির অবরোধ চলছে। জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকতে পারে। প্রায় ৫০০ হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও দুই হাজারেরও বেশি খাবারের দোকান নিয়ে কক্সবাজার দেশের শীর্ষ পর্যটন স্থান। কক্সবাজারের প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের করপোরেট সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার ইমাম-আল-রাজি বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছি। বড়মাপের ছাড় ও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েও অবরোধের মধ্যে পর্যটক পাচ্ছি না।’

প্রাসাদ প্যারাডাইসের কটেজসহ ১০০টিরও বেশি কক্ষ থাকলেও ৩১ অক্টোবরের পর থেকে প্রায় ৮৫ শতাংশ বুকিং বাতিল করা হয়। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল তিন শতাংশ। এছাড়াও সেই বছর এ খাতে মোট কর্মসংস্থান ছিল চার শতাংশ।

কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার আছে ৪৮২টি কক্ষ। গত সপ্তাহান্তে এর ৭০ শতাংশের বুকিং ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে রুম বুকিংগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর জানান, হরতাল-অবরোধের আগে প্রতিদিন এ কেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যটক আসত। এখন মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন পর্যটক আসছে। বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিট বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটনের ভরা মৌসুম চলছে। অথচ সুন্দরবন পর্যটকশূন্য। পর্যটকরা সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য ইতিপূর্বে বুকিং দিয়ে রাখা বিভিন্ন জাহাজ ও লঞ্চের যাত্রা বাতিল করে দিচ্ছেন। চলমান হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটকরা এ সময় সুন্দরবনে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। ফলে পর্যটন-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

সিলেটের জাফলং, শ্রীপুর, জৈন্তা রাজবাড়ী, লালাখাল, শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার; সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এবং মৌলভীবাজারের দৃষ্টিনন্দন চা-বাগান, মাধবকু- জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওরে এ সময়টায় পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। গত এক সপ্তাহে ১ শতাংশ পর্যটকও আসেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত কুয়াকাটায় এখন কলাপাড়া কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকার হাতেগোনা কিছু লোকজন ছাড়া দূরের কোনো পর্যটক নেই। সৈকত ও এর আশপাশের আকর্ষণীয় স্পটগুলো নির্জন পড়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

জানা যায়, কুয়াকাটার হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় আগামী শুক্র ও শনিবারের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং বাতিল হয়েছে। আগামী সপ্তাহান্তের জন্য কোনো রুম বুক করা হচ্ছে না। কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘অন্তত পাঁচ হাজার স্থানীয় মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ অঞ্চলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।’

একইভাবে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতেও তেমন কোনো পর্যটক আসছেন না। বান্দরবান সদর উপজেলার হিলসাইড রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রয়েল বম বলেন, ‘আমাদের রিসোর্টে ৬৫ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্র ও শনিবার ২৫ জন বুকিং করেছিলেন। পরে তারা তা বাতিল করে দেন।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //