অবৈধ ইটভাটায় কৃষি জমি কমছে

ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি

ইটের ভাটা বিষয়ে সরকারের নানা সতর্কতা এবং বিধি-নিষেধ থাকার পরও দেশের বিভিন্ন জেলায় আবাদযোগ্য জমির ওপর চলেছে এর নির্মাণ এবং সেই সঙ্গে চলছে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমি কমছে, অন্যদিকে কমছে মাটির উর্বরতা। ইটভাটার চিমনি দিয়ে গরম ছাইয়ের কণা নিকটবর্তী কৃষি জমিতে পড়ার কারণে জমির ফসল ও মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া ভাটায় ট্রাকের বেপরোয়া যাতায়াত, ইটের কণা চারপাশে ছড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে কৃষি জমিতে ফলনও কমে যাচ্ছে। কৃষি ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, সার্বিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি পরিবেশের ওপর। তাদের আশঙ্কা, কৃষিজমি হ্রাসের এই প্রবণতা ঠেকাতে না পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। দেখা দেবে জাতীয় বিপর্যয়। 

সরকারি নির্মাণকাজে পোড়া মাটির ইটের পরিবর্তে ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনাও অনেকটা কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সরকারি কাজের কত অংশে ব্লক ইট ব্যবহৃত হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। প্রচলিত ইটের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি উন্নয়নকাজে ব্লক ইট ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বলা হয়, সরকারি নির্মাণকাজে ধাপে ধাপে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানো হবে। এ জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজের ১০ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে।

সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন সব সরকারি নির্মাণকাজে অন্তত ৬০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্যই। সরকারি নির্মাণকাজের বড় অংশ বাস্তবায়ন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজে এখনো প্রচলিত ইটের ব্যবহার বেশি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট) আলী আখতার হোসেন বলেন, সরকারি নির্মাণকাজে এখনো বড় পরিসরে ব্লক ইটের ব্যবহার শুরু করা যায়নি। দেশের সব এলাকায় ব্লক ইট পাওয়াও যায় না। কিছু ক্ষেত্রে ব্লক ইটের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কিছু কাজে ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্লক ব্যবহারে আরও সময় লাগবে, তবে চেষ্টা আছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত ইটভাটাগুলো আসলে কতটুকু কার্যকরভাবে এসব প্রযুক্তি স্থাপন করেছে, তারও কোনো সামগ্রিক পর্যালোচনা এখনো পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে হয়নি। আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। কারণ যত দিন থেকে অভিযান চলছে, তাতে অবৈধ ভাটা থাকার কথা নয়।

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সহসভাপতি আসাদুর রহমান খান বলেন, ইটভাটা মালিকরা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। ইটের বিকল্প ব্লক কারখানার ব্যাপারে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর বাজার তৈরি করতে হবে সরকারকে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, দেশে ইটভাটার সংখ্যা ৭ হাজার ৮৮১। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৪৮টি বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর ৪ হাজার ৬৩৩টি ইটভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন অবৈধভাবে পরিচালিত। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাটি পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমাতে হলে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটের বিকল্প নেই। আমরা চাই ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ুক। সে জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //