বাজারে ‘তাচ্ছিল্যের শিকার’ মধ্য ও নিম্নবিত্তরা

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি হরহামেশাই খুচরা বিক্রেতাদের কটুকথার শিকার ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত ভোক্তারা।

আজ রবিবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

এক বছরের ব্যবধানে এই রমজানে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। নিত্যপণ্যের এ লাগামহীন দামে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। রোজার পণ্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই এখন মধ্য ও নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে। সংসার চালাতে তাই বাজারের তালিকায় কাঁচি চালিয়েও মিলছে না খরচের হিসাব। ছোট তালিকার পণ্য কিনতে এসে শিকার হতে হচ্ছে বিক্রেতাদের তাচ্ছিল্য ও কটুকথার, অভিযোগ করেন ক্রেতারা।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে মুরগি বিক্রেতার সঙ্গে লাবনী আক্তার (৩৮) নামের এক ক্রেতার কথা কাটাকাটি লক্ষ করা যায়। বিক্রেতার অভিযোগ, ১টি মুরগি কেনার জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছেন ক্রেতা। শেষমেষ ‘ব্যবহার ভালো করেন’ বলে চলে যান লাবনী। কিন্তু পেছন থেকে দোকানিদের কটুকথা চলে আরও কয়েক মিনিট।

লাবনী আক্তার বলেন, সোনালি মুরগির পিস জানতে চাইলে দোকানদার জানান ৩৫০ টাকা। এসময় ওজন দেখতে চেয়েছি বলে উনি খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। শেষমেষ ১টা মুরগি নেব শুনে উনি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেন এবং বলেন ‘ওজনে নিলে ব্রয়লার নেন। সোনালি খাওয়া লাগবে না।’ অর্থের বিনিময়ে জিনিস কিনতে এসেও এমন হয়রানির শিকার হওয়াটা লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই গৃহিণী আরও বলেন, সবখানেই একই অবস্থা। তেল, পেঁয়াজ এক পোয়া বা আধা কেজি কিনতে গেলে দোকানদাররা মুখের দিকে তাকান এবং বিরক্তবোধ করেন। আর দোকানে বড় খরচের অন্য ক্রেতা থাকলে সেইসময় তাদের গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও সবার শেষে বাজার নিতে হয় তাই। টাকা দিয়ে পণ্য কেনার পরও এমন অবহেলা, মুখ বুজে সহ্য করা হয় শুধুমাত্র সদাইয়ের পরিমাণ কম বলে।

৪৫ বছর বয়সের মো. আব্দুল গণি কারওয়ান বাজারে কুলির কাজ করেন, থাকেন রাজধানীর তেজগাঁও। পরিবারে স্ত্রী-সন্তানসহ সদস্য সংখ্যা ৫। ২০ বছর বয়সী বড় ছেলেও তার সঙ্গে একই কাজ করেন। বাবা-ছেলে মিলে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় ২২ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। বাকি টাকায় চলে সংসার।

মো. আব্দুল গণি বলেন, বাজারে সব কিছুর যে দাম, এত অল্প টাকায় সংসার চালানো যায় না। আগে মাছ-ডিম কেনা হত, এখন সেটাও পারা যায় না। শুধু সবজি কিনেই চলছে ছোট এই সংসার। তবে রোজা আসার পর থেকে সেহরিতে খাওয়ার জন্য অল্প টাকায় মাছ কিনতে গেলে দোকানদাররা বিরক্ত হোন। শুনেও না শোনার ভান করে থাকেন তারা। ১৫০ টাকার ছোট মাছ কিনতে গিয়ে নানান বিড়ম্বনার কথা শোনান আব্দুল গণি।

হাতিরপুল বাজারে তরমুজ কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়েন রেজাউল করিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজার টাকায় চাকরি করা রেজাউল বলেন, ছোট মেয়েটার জন্য ইফতারে তরমুজ কিনতে গিয়ে দেখা যায় ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজির নিচে কোনো তরমুজ নেই। একটু ছোট তরমুজ খোঁজার কথা দোকানিকে বলতেই তিনি তাচ্ছিল্য করে বসেন বলে জানান রেজাউল।

ক্রেতাদেরকে তাচ্ছিল্য করার বিষয়টি অস্বীকার করে দোকানদাররা বলছেন, অল্প কিনুক আর বেশি কিনুক, সবাই ক্রেতা। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ব্যবসা হতে পারে না। তবে ক্রেতার চাপ বেশি থাকলে, যার পণ্যের চাহিদা ও পরিমাণ বেশি, তাকে আগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এক্ষেত্রে যারা কম জিনিসপত্র কিনতে আসেন তারা কিছুটা বেশি সময় অপেক্ষা করেন। এটাকে তারা তিক্ত অভিজ্ঞতা বলতে পারেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ছোট হোক বড় হোক, ক্রেতা তো ক্রেতাই। তাদের সবাইকে সম্মান জানানো উচিত। অল্প পণ্য কিনতে যাওয়া ক্রেতাদেরকে অবহেলা করার যে মনোভাব বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটি কখনোই ব্যবসায়ীসুলভ আচরণ হতে পারে না। সেক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণ করেন, এমন বিক্রেতাদের পরিহার করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, এই রমজানে সবজি, মাছ-মাংস ও মসলা পণ্যসহ মোট ২৯টি পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। শনিবার (১৬ মার্চ) থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তদারকির অভাবে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য। ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি হওয়ায়, খুচরা পর্যায়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মূল্য নির্ধারণ করার পরও সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //