নিম্ন আয়ের দেশগুলোর বিবিধ চ্যালেঞ্জ

এ সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো-উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের ঝুঁকি। সেই সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর। প্রথমত মুদ্রা বিনিময় হার সংস্কার বিলম্ব হওয়ায় তা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। দ্বিতীয়ত জিনিসপত্রের বাড়তি দামের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকা। তৃতীয়ত সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি না নেওয়ায় তা আর্থিক খাতের চলমান ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

এসব ঝুঁকির সঙ্গে ভূ-রাজনীতি, ভূ-অর্থনীতির বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভূ-রাজনৈতিক জটিলতার কারণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি একই মুদ্রার দুই দিক। এ দুটোই মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য সুবিধা ও ক্ষতি দুটোই রয়েছে। এটি নির্ভর করছে জনগণের সঙ্গে সরকারের কতটা সমর্থন ও সম্পৃক্ততা রয়েছে তার ওপর।

নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য এ সবকিছুর চেয়ে বড় সংকট হলো ঋণের বোঝা, এই দেশগুলোর জন্য যা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত ঋণের চাপে ইতোমধ্যে আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অনেক দেশ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে নিম্ন আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশগুলো করোনা মহামারি ও বিশ্বব্যাপী চলমান নানা সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় ২০২৪ সালে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ। গত জানুয়ারিতে দেওয়া ৪.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৪.৭ শতাংশ করেছে সংস্থাটি। পৃথক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বিশ্বের ৭৫টি দরিদ্র দেশের প্রায় অর্ধেকেই ধনী দেশগুলোর তুলনায় আয় ব্যবধান ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘সাম্প্রতিক ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা জোরদার করতে কাজ করছে আইএমএফ।’ ক্রিস্টালিনা ও সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী এবং আইএমএফের স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আল জাদান জানান, আইএমএফের গৃহীত নীতিমালা অভ্যন্তরীণ ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত ও সহজ করতে সহায়তা করবে। ক্রিস্টালিনা আরও বলেন, ‘আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত চলতি সপ্তাহের বৈশ্বিক সার্বভৌম ঋণসংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠকে ঋণ পুনর্গঠনের সময়সীমা নির্ধারণ ও ঋণদাতাদের তুলনাযোগ্যতা নিশ্চিত করার নীতিমালার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।’

অধিক মাত্রায় ঋণগ্রহণ আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোসহ নিম্ন আয়ের অনেক দেশের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশগুলো এখন গড়ে মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির ১২ শতাংশ ঋণের মুখোমুখি, যা এক দশক আগেও ছিল ৫ শতাংশ। জর্জিয়েভা বলেন, ‘পরিতাপের বিষয় হলো, কিছু দেশকে মোট আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এর মানে দেশগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগের খুব কমই সুযোগ পাচ্ছে।’ এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি আইএমএফের পরামর্শ হলো, মূল্যম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর বৃদ্ধি, ভোক্তা ব্যয় কমানো ও স্থানীয় পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করতে হবে।

বুলগেরিয়ার অর্থনীতিবিদ আইওলান্ডা ফ্রেসনিলো বলেন, ‘দেশগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজেদের আরও আকর্ষণীয় করে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ তাদের সহায়তা করতে পারে।’ 

তিনি আরও জানান, সার্বভৌম ঋণের প্রবাহ মোকাবিলা করার জন্য জাতিসংঘের উচিত একটি বহুপক্ষীয় আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন করা। যেভাবে ট্যাক্স করপোরেশন পরিচালনায় নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান কাঠামোটি খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে রয়েছে। এটিকে বৃহত্তর পরিসরে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশের অবক্ষয় ও মানবাধিকার বিবেচনায় নিয়ে প্রণয়ন করা উচিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //