যুক্তরাষ্ট্রের মজুদ কমে যাওয়া ও কানাডায় দাবানলের কারণে সরবরাহ ঝুঁকিতে পড়ায় সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের দখলীকৃত গোলান এলাকায় চালানো রকেট হামলার পর উদ্ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় জ্বালানি পণ্যটির দাম আরও বাড়তে পারে।
১৯ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদ কমেছে ৩৯ লাখ ব্যারেল, পেট্রল ২৮ লাখ ব্যারেল ও ডিস্টিলেটস ১৫ লাখ ব্যারেল। তখন জ্বালানি তেলের দাম ৩৭ সেন্ট বা দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যারেলপ্রতি মূল্য পৌঁছায় ৮১ ডলার ৩৮ সেন্টে। এর আগের সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, পেট্রল ও ডিস্টিলেটসের মজুদ টানা চতুর্থবারের মতো কমেছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।
এদিকে কানাডায় দাবানলের কারণেও জ্বালানি তেলের সরবরাহ ঝুঁকিতে পড়েছে এবং সে কারণেও তেলের দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন এলএনজি বিশ্লেষকরা। তারা রয়টার্সকে বলেছেন, দাবানলের কারণে কানাডার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত তেল উত্তোলন করতে পারেনি। এ কারণে সরবরাহ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরিষেবা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছিল, গত মাসে ওপেক প্লাসের বেঁধে দেওয়া কোটার কাছাকাছি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা শোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে ওপেক প্লাসের বেঁধে দেওয়া কোটার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছি। তবে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন এখনো অনেকাংশে স্থিতিশীল। তবে দাবানলের কারণে উত্তোলন কমার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই আশঙ্কা ছিল তেলের দাম আবার শতকের ঘরে উঠে যাবে। কিন্তু চীনের ও সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে তেমন চাহিদা না থাকার কারণে তেলের দাম শেষ পর্যন্ত তেমন একটা বাড়েনি। তবে ২৭ জুলাই গোলান উপত্যকায় হামলার জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার জেরে ২৯ জুলাই সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮১ দশমিক ৩৩ ডলারে উঠেছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ৯ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৭৭ দশমিক ২৫ ডলারে ওঠে।
এদিকে লন্ডন স্টক এক্সেচেঞ্জের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমেছিল। কিন্তু ১৪ জুন এশিয়ার সাপ্তাহিক স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ১২ ডলার ৬০ সেন্টে পৌঁছায়, যা মার্চের দামের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ডাচ টিটিএফ মার্কেটে প্রাকৃতিক গ্যাসের জুনে সরবরাহ চুক্তিমূল্য প্রতি মেগাওয়াট আওয়ারে ৩৮ ইউরো বা ৪০ ডলারে পৌঁছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ দাম। একই সময়ে হেনরি হাব মার্কেটে প্রতি মিলিয়ন এমএমবিটিইউ গ্যাস পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ ডলার ১০ সেন্ট চুক্তিমূল্যে বেচাকেনা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক। দেশটি এ বছর ১৯৬১ সালের পর সবচেয়ে গরম বসন্তকাল পার করেছে। চলতি মাসেও রাজধানী বেইজিংসহ সানডং ও হেবেই প্রদেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অধিক তাপমাত্রার কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও বেড়েছে। কয়লা বা পারমাণবিক বিদ্যুতের চেয়ে এর দাম বেশি। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বেশি সাশ্রয়ী। ফলে শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে কৃত্রিমভাবে উষ্ণ বা ঠান্ডা পরিবেশ তৈরিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ভালো বিকল্প।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস অনুসারে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চলতি বছর ৯৩ হাজার ৭০০ কোটি কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হবে, যা ২০২০ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এটি বৈশ্বিক প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ।
এদিকে গ্যাসের বৈশ্বিক মজুদও স্থিতিশীল। গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট মজুদ সক্ষমতার ৭৪ শতাংশই পূর্ণ আছে, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১০ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রেও পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ মজুদ বেশি রয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেল গ্যাস
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh