শিক্ষার্থীদের ভাবনায় শোক দিবস

আজ শনিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী। শোক দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন তানভীর আহম্মেদ।

১৫ আগস্ট মানেই বেদনাদায়ক স্মরণীয় একটি দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর পরিবারবর্গ সমেত হত্যার মাধ্যমে ঘাতকরা নতুন ইতিহাসের জন্ম দেন। এই ইতিহাস বাঙালির লজ্জার ইতিহাস। এই ইতিহাস জাতির অভিভাবক হারানোর ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাধারণ জনতার আশা-ভরসার প্রতীক। বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের প্রাণের নেতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঘাতকরা চেয়েছিল তার অস্তিত্ব মুছে দিতে। কিন্তু, তারা সেটা পারেনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে যেমন ছিলেন তেমন হয়ে বেঁচে আছেন, থাকবেন।
-কানিজ ফাতেমা রুপা, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

শোক শব্দটি মূলত এসেছে কোনো অন্ধকার অধ্যায় থেকে, যা কেবল বিষাদ দ্বারা পূর্ণ। শোক কখনও হয় ক্ষুদ্র আবার কখনো বা বৃহৎ। এই শোকটা যখন কোনো উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্য হয় তখন তা হয়ে পড়ে বিষাদময় কাল। এমনই এক শোক নিয়ে বলছি যা বাঙালি জাতি ৪৫ বছর যাবত লালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নিজ বাসভবনে ঘাতকদের হাতে খুন হন। এটি শুধুমাত্র নিছক ব্যক্তি বিশেষের হত্যাকাণ্ড ছিল না। এটি ছিল জাতির অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এর মাধ্যমে যে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই নীতি ও আদর্শকেই ঘাতকেরা হত্যা করতে চেয়েছিল। চাইলেও তারা পারেনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে ফেলতে। শোক দিবসের শোককে শক্তিতে পরিণত করে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করাই হোক বাঙালি জাতির মূল লক্ষ।
-মোহাম্মদ গালিব ইশরাক ইমরান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫। সেই শুক্রবারকে নিজেদের একাদশে বৃহঃস্পতি ভেবেছিল কিছু বর্বর, আর শনি নেমে এসেছিল জাতির এক আদর্শ আত্মার পরিবারে। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ির আঙিনায় সে প্রহরে পাখির ঝঙ্কার ছাপিয়ে উঠেছিল গুলির হুঙ্কার। কবিগুরু হয়তো কলমশৈলী বদলাতেন 
'প্রহর শেষে রক্তে রাঙা সেদিন আগস্ট মাস, স্বার্থমহল করে গেল জাতির সর্বনাশ।' জীবন আয়ুর সীমায় আটকে যায়, তবে সুকর্ম অমর থাকে প্রজন্মান্তরে। শোষিত জাতিকে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র আর টগবগে স্বপ্ন উপহার দেয়া মানুষটির জন্য সাড়ে চার দশক পরেও আমরা শোককাতর। বঙ্গবন্ধুর চেতনা শ্রদ্ধাবোধের সাথে নিজের জীবনবোধেও যুক্ত করে নিলে তা আরও ফলপ্রসূ হবে।
-তাহসিন তাজমিন, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর।

শোকের মাস আগস্ট। ৭৫ এর আগস্টে স্বাধীন দেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে স্বপরিবারে হত্যার পর জাতীয় জীবনে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাঙালি জাতির জন্য এই শোক কখনো শেষ হওয়ার নয়। কেননা, বাঙালি জাতির পথ প্রদর্শক, রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর  পরিবারকে নির্মমভাবে হারাতে হয়েছে আমাদের। এই হত্যার মাধ্যমে বাঙালির অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যে আদর্শ, লক্ষ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি গড়ে উঠেছিল তা ধ্বংস করা হয়েছে। স্বাধীন দেশে হঠাৎ হায়েনার আঘাত জাতির বুকে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে তা কখনো পূরণ হবে না। তবুও তার অহর্নিশ শোকের নিরবচ্ছিন্ন বেদনাকে আঁকড়ে ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। তার দেখানো স্বপ্নে আরো বহুদূর এগিয়ে যাবো আমরা। বঙ্গবন্ধু চিরজীবন তার কৃতকর্মে এবং আদর্শে অমর থেকে যাবেন।
- মেহেদী হাসান, গণ বিশ্ববিদ্যালয় 

নেতা এবং পথ প্রদর্শক  শব্দ দু'টির মাঝের পার্থক্যটা আকাশ-পাতাল। কিন্তু, যদি এক ব্যক্তির মধ্যে দুটো জিনিসই থাকে তাহলে তো বুঝায় যায় তিনি কত বড় মাপকাঠির মানুষ। এমনি একজন বাঙালি জাতির প্রাণের নেতা, জাতির পথ প্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ কি, দেশপ্রেম কি এই চেতনাটাই জাগিয়েছিলেন এই মহান মানুষটি। আমাদের মাটি যে কেবল আমাদেরই আর তা যেকোনো মূল্যেই আমাদের আদায় করে নিতে হবে তাও শিখিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু, তাঁর কিছু বখে যাওয়া পথভ্রষ্ট সন্তানই হত্যা করেছিল তাদের পিতাকে। সে এক ভয়াল কালো অধ্যায়৷ নিজেদের জাতির পিতাকেই মেরে ফেললাম ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। কিন্তু, যতদিন এই জাতির অস্তিত্ব থাকবে ততদিনই তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শের মাঝে। 
-সাজিয়া আফরিন সুলতানা মিথিল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি 

আগস্ট মাস শোকের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে  হত্যা করা হয়েছিল। শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চাইলেও বঙ্গবন্ধু গেঁথে আছেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু ভালোবাসা দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। শুধু রাজনীতিতে নয়, মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে, জানাতে হবে। তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুকে জানার বিকল্প নেই। শুধু নামে রাজনীতি নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সবাইকে তা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।
- মো. মমিন সরকার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় শোক দিবস সাধারণ কোন দিবস নয়। এটি জাতির জন্য মর্মামত, বেদনাদায়ক এবং করুণ ইতিহাসের এক কালো দিন। স্বাধীন দেশের জঘন্যতম কিছু পিশাচ জনতার আদর্শের নেতা, বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে গোটা জাতিকে ঘৃণ্যতম কাজ উপহার দেয়। আমরা সকলেই জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা আত্মত্যাগী দেশপ্রেমী ব্যক্তি ছিলেন। এমন একজন মানুষকে এভাবে খুন করা হলো যেটা থেকে লজ্জ্বার আর কিছুই হতে পারে না। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ আজও আমাদের তরুণের অন্যয়ের বিরুদ্ধে শক্ত গলায় কথা বলতে শেখায়। মুক্তিযুদ্ধে তার নেওয়া প্রতিটি প্রদক্ষেপ আজও একজন আদর্শ নেতার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। ঘাতকের ঘৃন্যতম কাজ ঘৃণ্যই থেকে গেল আর মহান মানুষের কাজ মহানই রয়ে গেল। এটাই হলো জাতীয় শোক দিবসের মূল উপজীব্য বিষয়।
- হাফিজা আক্তার, উত্তরা ইউনিভার্সিটি 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //