বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, সৃষ্টিশীল প্রতিভা ও মননশীল জ্ঞান চর্চাক্ষেত্র। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাকার্যক্রম আজ অনেকাংশেই স্থগিত।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পর্যায়ক্রমে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, কল-কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছিলো সরকার। অর্থনৈতিক ও জনজীবনের স্বার্থে অফিস-আদালত, কল-কারখানা ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও থমকে আছে শিক্ষাব্যবস্থা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ যে শিক্ষার্থীরা, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে কি ভাবছে? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি।
মো. ইরফানুল হক
ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, মাস্টার্স
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
সামনে শীতকাল আসছে ফ্লু জাতীয় রোগ এমনিতেই বাড়বে। সাথে করোনা মহামারি আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। কোনোভাবেই এখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিৎ না। তবে যারা শেষবর্ষের ব্যাকলগ পরীক্ষার জন্য আটকে আছে তাদের ব্যাপারটা বিভাগ বিবেচনা করবে আশা করি। তারা সংখ্যায় কম, তাই অনালাইনে বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষার নেয়া যেতে পারে।
মো. কামাল হোসেন
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সারাদেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা পুরো এক বছর শিক্ষাজটে পড়েছে। যদিও এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তারপরও মনে হচ্ছে এখন সময় হয়েছে প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া যেতে পারে।
রানা আহমেদ
পরিসংখ্যান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়ও কারও জানা নাই। সব বিধিনিষেধ মেনে প্রত্যেক শ্রেণির পাঠ্যসূচির সিলেবাস কমিয়ে, প্রত্যেক শ্রেণিকে উপশ্রেণিতে বিভক্ত করে পৃথকভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়, এরপর পর্যায়ক্রমে কলেজ ও স্কুলগুলো খুলে দেয়া উচিত।
ইমন মাহমুদ
ইংরেজি বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় হলো একদিকে পড়াশোনা ও একইসাথে শিক্ষা প্রাঙ্গণে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা ও ভাব বিনিময়ের মিথস্ক্রিয়া। অন্য সবকিছুর মতোই ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলে দেয়া সম্ভব। ভাইরাস যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ক্লাস শুরুর আগে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের মাস্কসহ যাবতীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি বিনামূল্যে সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে। যাদের সেমিস্টার পরীক্ষা আটকে আছে প্রথম ধাপে তাদের পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে ও ধাপে ধাপে পুরোপুরিভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
মো. সুমন
মার্কেটিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ব্যবস্থা আছে, যেখানে শতাধিক থেকে হাজারের অধিক শিক্ষার্থী থাকে। কিছু কিছু হলে গণরুম ব্যবস্থাও সচল আছে। করোনা পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়া একদম অনুচিত হবে। শিক্ষার্থীদের থাকার যথাযথ ব্যবস্থা করে, সেই সাথে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো ও দূরত্ব মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করা উচিত, অন্যথায় নয়।
ইমন দে সানু
সংস্কৃত বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রত্যেকটা ছেলে-মেয়ে যথেষ্ট সচেতন। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সবাই যদি নিজ নিজ সুরক্ষার ব্যপারে চিন্তিত থাকে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী উভয়ের ভুমিকাতেই ব্যাপারটা সহজ হবে। শাটলে ভিড়-যাতায়াত কমাতে সপ্তাহ জুড়ে সব ডিপার্টমেন্টের কার্যদিবস না রেখে, নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী ক্লাস বন্টনের মাধ্যমে পরিচালনা করলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। এখন কোথাও কোথাও অনলাইন ক্লাস হলেও জটিলতা, নেটওয়ার্কের গতিস্বল্পতা সব মিলিয়ে সন্তুষ্টি নেই তাতে। এই দীর্ঘ সময়ে আটকে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা বেশিরভাগই মানসিক অবসাদে ভুগছে। টিউশন হারিয়েছে অনেকে। এদের সংখ্যাটা কম নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত গভীর পর্যবেক্ষণ করা।
ওয়াসিম আকরাম
ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন, মাস্টার্স প্রথম বর্ষ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে ও এতে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হবে বা মানবে এতা একটা বড় প্রশ্ন? একজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে দায়ভার কে নেবে? শীতকালে মহামারির কথা বিবেচনা করে নিজের ও দেশের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিতে আগামী শীতকাল শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ।
প্রীতম রায়
মার্কেটিং বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
‘শিক্ষার্থীরা করোনায় মরবে না, মরবে পড়াশোনার অতিরিক্ত বিরতির মানসিক দুর্বলতায়।’ এই মানসিক চাপে শিক্ষার্থীরা মৃত্যুঝুঁকিতে, এমনকি অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ছাত্রীদের বাসায় বিয়ে সমাচার নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে, যার কারণে একটা মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই যন্ত্রণা থেকে শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে মুক্তি পেতে চাই। তার জন্য বর্তমান প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাবিরতি দূর করা জরুরি। আর এই জটিলতা দূর করতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক তদারকি, শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সহজেই করোনাকালীন অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সেশনজট নিরসন সম্ভব।
শাহাদাত হোসাইন সাকিল
তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান করে, এর মধ্যে অনেক বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকাও আছে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে প্রায় লক্ষাধিক আক্রান্ত হওয়ার খবর আমরা সবাই জানি। তাই সরকারের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত। একইসাথে সবার জন্য অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
জি এম ইকলাজ গাজী
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন বিভাগ, চূড়ান্ত বর্ষ,
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী
ভাইরাসের প্রকোপ না যাওয়া পর্যন্ত, ভার্সিটি না খোলাটাই ভালো। তবে আশেপাশে তাকালে ভাইরাসের প্রকোপ আগের মতো আছে বলে মনে হয় না। প্রায় সব জায়গায় মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। রাস্তাঘাট, মার্কেটপ্লেস আগের মতো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেইদিক থেকে দেখলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইউনিভার্সিটি খোলা উচিত।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh