শাবিপ্রবি: আন্দোলন চলছে, ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

আন্দোলনের তৃতীয় দিন আজ রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

তবে এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশের আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) উপাচার্য হল সম্পর্কিত তাদের বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়েছেন এবং তা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছেন।

প্রক্টর আরও বলেন, আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যাতে কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি হয় এমন কিছু না করেন। উপাচার্য সার্বিক বিষয়টি দেখছেন।‌

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে হলটির আবাসিক এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফোনে আলাপকালে হলটির প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা খারাপ ব্যবহার করেছেন-এমন অভিযোগে তার ও সহকারী প্রাধ্যক্ষ রাবেয়া তোড়ার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামেন ছাত্রীরা।

শুক্রবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে উপাচার্য বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানালেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানা হয়নি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।

ওইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবি ৩টি মানার জন্য শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় দিয়ে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেন ছাত্রীরা।

ছাত্রীদের ৩ দফা দাবি হলো-

১. বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগ।

২. ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ।

৩. যাবতীয় অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে হলের সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাদের এ ৩ দফা দাবি না মানায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে 'এক কিলোমিটার সড়ক' অবরোধ করেন।

৭টার দিকে অবরোধ চলাকালীন সময়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরীয় কমিটির সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলমগীর কবির।

তিনি বলেন, 'সড়ক অবরোধ করায় শিক্ষকদের গাড়ি যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে। এ অবস্থায় একটি শিক্ষকের স্ত্রী প্রসববেদনা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যাওয়ার সময় বাধার সম্মুখীন হলে একদল শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তখন আরেকদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। কিন্তু কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজা অসুস্থ থাকায় তার জায়গায় দায়িত্ব পালনের সাময়িক দায়িত্ব অধ্যাপক জোবেদা কনক খানকে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তাকে পদচ্যুত করার কোনো কারণ আপাতত নেই।'

তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ ছিল। তারা সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। হল সম্পর্কিত কিছু সমস্যায় তাদের দাবি মেনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু শিক্ষার্থীর ইন্ধনে হলের ছাত্রীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।'

শাবিপ্রবি এবং হলগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে দাবি করে উপাচার্য বলেন, 'অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে শাবিপ্রবি আবাসিক পরিবেশ চমৎকার। কারো স্বার্থে একটি ছোট বিষয় বড় করে তোলা হচ্ছে।'

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //