মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ‘অদম্য বাংলা’

ভাস্কর্য বহন করে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংগ্রামী ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ‘অদম্য বাংলা’।  তেইশ ফুটের  উঁচু বেদিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিন অদমনীয় পুরুষ, দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিপ্লবী ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। ডান পাশেই শাশ্বত বাংলার সংগ্রামী নারী এক হাত উত্তোলিত ও অন্যহাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দৃঢ়চিত্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয় । মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদানের একটি অংশের প্রতিচ্ছবি তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের প্রতীক আমাদের  ‘অদম্য বাংলা’ । 

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখের বেশি মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে পাকিস্তানী শত্রুসেনাদের পরাজিত করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাসের ধারক এই ভাস্কর্যটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেজস্বী প্রকাশের জন্য এই ভাস্কর্যটি অনবদ্য

মূল ভাস্কর্যের চারপাশ উঁচু বেদিতে ঘেরা। বেদির চারদিকটা টেরাকোটার কারুকার্য খচিত। যেখানে পোড়ামাটির আচরে তুলে ধরা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তর্জনি উঁচু করা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার ও বধ্যভূমি যেখানে পাক সেনাদের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আরও রয়েছে যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর আত্মসমর্পণের গৌরবময় মূহুর্ত। এক কথায় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয় এই ভাস্কর্যটি।

ভাস্কর্যের স্থপতি শিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল তার অনন্য দক্ষতায় মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের শৈল্পিক রূপ প্রদান করেছেন। তারই প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৫৬ তম সভায় এর নামকরণ করা হয় ‘অদম্য বাংলা’ । ভাস্কর্যটি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৪২ লাখ টাকা।

ভাস্কর গোপাল চন্দ্র পাল জানান, বর্তমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা প্রশাসনিক ভবনটি ১৯৭১ সালে ছিল একতলা বেতারকেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কেন্দ্রকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়। মুক্তিকামী অসংখ্য মানুষকে এখানে ধরে এনে হত্যা করা হয়। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়ায় এমন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য নির্মানের ব্যাপারটি গৌরবের। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জায়গা থেকে তিনি এই মননশীল শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্ জানান, প্রতিষ্ঠার প্রায় ২১বছর পর ২০১২ সালে এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়। বধ্যভূমির উপর নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য নির্মিত হোক। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই এই ভাস্কর্য নির্মিত হয়।

পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিলয় সরকার বলেন, বধ্যভূমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত আজকের এই বিশ্ববিদ্যালয়। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি যোগাবে অদম্য বাংলা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //