স্বপ্ন থেকে সফল উদ্যোক্তা খুবির লিন্তি

একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পিছনে থাকে ছোট ছোট অনেক গল্প , অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ধৈর্য ধারণের পরীক্ষা। স্বপ্ন পূরণের পথে  আসে নানা বাঁধা, কিন্তু সকল বাঁধা অতিক্রম করে আত্মবিশ্বাসের সাথে যারা এগিয়ে যায় সফলতা তাদেরই ধরা দেয়। তেমনই  একজন উদ্যোক্তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী লিন্তি খাতুন।

তার এই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা হুট করে নয়। এই স্বপ্ন তার মনে বাসা বেঁধেছিল ২০১২ সালে নবম-দশম শ্রেনীতে উদ্যোগ বইয়ে যখন সফল কোন উদ্যোক্তার গল্প পড়তেন। তখন থেকেই তার স্বপ্ন দেখা শুরু। কিন্তু তখন উদ্যোক্তা হওয়া ব্যাপারটা এতো সহজ ছিল না কারন তখন এমন অনলাইন প্লাটফর্ম ছিল না। তারপর কেটে যায় অনেক বছর। বারবার স্বপ্ন দেখা হলেও স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে পারেননি। সবথেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল সময়ের অভাব।

২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় যখন গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর, দেশে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ  সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘড়ে বসে অলস সময় পার করতে হচ্ছিল লাখো শিক্ষার্থীকে। কিন্তু এই অলস সময়কেই হাতিয়ার বানিয়ে নিজেকে তৈরি করেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।  প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন লিন্তি খাতুন। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সেই সময়টা খুব মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ ৩ মাস। তারপর হঠাৎ একদিন ‘উইমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)’ নামে একটি গ্রুপে জয়েন হতে সাজেস্ট করেন তার একজন আপু, যুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হতে থাকেন ।

অবশেষে ২০২০ সালের ১৯শে আগস্ট তিনি উদ্যোগের যাত্রা শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের মধু নিয়ে। এভাবেই একজন পূর্ণ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন তিনি, এরপর আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি তাকে। একে একে যুক্ত করেছেন গাওয়া ঘি, চুইঝাল, আচার, বিভিন্ন ধরনের মশলা, মরিঙ্গা পাউডার, বাসক পাউডার, সরিষার তেল, নারিকেল তেলসহ বিভিন্ন সিজনাল জিনিস নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘গ্রুপ এবং আমার স্বামীর সাপোর্ট ছিল আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এছাড়া আমার ব্যাচমেট, সিনিয়র, জুনিয়র, আশেপাশের মানুষ খুব সাপোর্ট দিয়েছে। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমি একজন শিক্ষার্থী এবং বিবাহিত, সংসারের বিভিন্ন কাজ আছে তা সময় বের করতে বেশ কষ্ট হয়, বিশেষভাবে যখন পড়াশোনার প্রেসার বেড়ে যায় খুব সমস্যা হয় টাইম ম্যানেজমেন্টে, তখন বিক্রি কমে যায়। তবুও স্বামী তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার, ঘরের কাজ বা বিজনেসের কাজ সব কিছুতেই সে অনেক সাহায্য করে তাই সবদিক সামলে নেওয়াটা তুলনামূলক সহজ হয়।’

এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী খাতায় তালিকাভুক্ত ফেসবুক ই-কমার্স প্লাটফর্ম উই হতে সম্মাননা ক্রেস্ট। শুধু তাই নয়,উদ্যোক্তা হওয়ার পর অনেকজনকে অনুপ্রাণিত করেছেন  উদ্যোক্তা হতে। তাছাড়া কয়েকজনকে কাজের সুযোগ করে দিতে পেরেছেন তার ‘লিন্তিস মিনিমার্ট-এ। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৫ লক্ষ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি চাই ভবিষ্যতে আমার ‘লিন্তিস মিনিমার্ট’কে দেশি পণ্যের একটি ব্রান্ড হিসেবে তৈরি করতে। দেশি পণ্যকে প্রসারিত করতে এবং বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে।’


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //