প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও ক্লাসরুম পায়নি জাবির আইন বিভাগ

প্রতিষ্ঠার দশবছর পার করলেও আলাদা একাডেমিক ভবন পায়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একটিমাত্র কক্ষে চলছে পাঁচটি ব্যাচের প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম। নেই সেমিনার লাইব্রেরির সুবিধা ও আলাদা ডিন অফিস। তাই পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ভবনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গতকাল মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও বিভাগীয় প্রধান তাপস কুমার দাস বলেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হয়েছে আমরা সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মানে একটা ক্লাসরুমের নিশ্চয়তা থাকা, একাডেমিক কার্যক্রমের সব সুযোগ-সুবিধা থাকা। সকল অন্যায় অবিচারের মধ্য দিয়ে জাবির আইন বিভাগ আজ ১০ বছর পূর্ণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় আমাদের আশ্বাস দিয়ে এসেছে। আমি ২০১৪ সালে যোগদানের পর থেকে শুনে আসছি আমাদের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হতে চলেছে। কখনো শুনেছি সমাজবিজ্ঞান ভবনে একটা উইং করে  আমাদের জায়গা দেয়া হবে; নতুন কলা ফাঁকা হলে সেখানে দেয়া হবে; পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্থানান্তর হলে সেখানে দেয়া হবে। কিন্তু সেগুলোর কোনটাই করা হয়নি।  সর্বশেষ বলা হয়েছে পুরাতন রেজিস্ট্রার ফাঁকা হলে সেখানে আমাদের জায়গা দেয়া হবে। কালকেও আমরা শুনেছি ভবিষ্যতে হবে। তবে সেটা আমার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব কিনা জানি না।’

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান সজীব বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষকরা আমাদের সাথে কোনো প্রতারণা করেন নাই। সবকিছু ঠিক থাকলে জুন মাসে ৪৭ ব্যাচ ফাইনাল ইয়ার এক্সামে বসবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সকল ডিপার্টমেন্টের আগে। তারা যদি প্রতারণা করতেন, তাহলে এত দ্রুত এবং সফলভবে একাডেমিক কাজ চলতো না। প্রতারণার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে একবাক্যে বলা যায়, প্রতারক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। বারবার নানা কথা বলে সমাজবিজ্ঞানে একটা উইং দিয়ে দেয়া হবে, নতুন কলায়, পুরান রেজিস্ট্রার খালি হলে সেখানে আইন অনুষদ হবে ইত্যাদি বলে সময়ক্ষেপণ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।

ডিন তাপস কুমার দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত যে প্রকল্পগুলো সেটা দেখে আমি সম্পূর্ণরূপে হতাশ হয়েছি। একাডেমিক কার্যক্রমের কোনো সদিচ্ছা আমি এ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে দেখতে পাইনি। গত ১০ বছর কি যথেষ্ট নয় একটা বিভাগের উন্নতির জন্য? জাবিতে একক বিভাগ হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীরা এ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। গত ১০ বছরে আমি অন্তত ৫ কোটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা রাজস্ব দিয়েছি। কিন্তু বিভাগের জন্য একটা ইটও কেনা হয়নি। হরিলুটের মত অর্থ প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার পর বরাদ্দ হয়ে যায়। ফলে এ একাডেমিক চাহিদাগুলো কিভাবে পূরণ হবে?

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাইম আনিকা বলেন, যদি প্রশাসন মনে করে এভাবেই বঞ্চিত করবে, তাহলে  সেটা কখনোই হতে দেয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

উল্লেখ্য, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রথম ধাপে ৬টি আবাসিক হলের পর দ্বিতীয় ধাপে ১৪টি স্থাপনার কাজ শুরু হবে শীঘ্র। দ্বিতীয় ধাপের ১৪টি স্থাপনার মধ্যে  নতুন প্রশাসনিক ভাবন, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, শিক্ষকদের আবাসিক কমপ্লেক্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আবাসিক টাওয়ারের উল্লেখ থাকলেও নেই শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক ভবন।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //