ভোগান্তি কমেনি গুচ্ছে তবু একক ভর্তি পরীক্ষা

ভোগান্তি কমেনি গুচ্ছ পদ্ধতিতে। এর মধ্যেই আসছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা। ফলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধার কারণে একক ভর্তি পরীক্ষা চালু করা যাচ্ছে না। এবারের উদ্যোগ কতটা সফল হয়, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। 

মূলত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের একটি বড় অংশ ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত সম্মানী কমে যাওয়ার আশঙ্কা ও একগুঁয়েমির জন্য গুচ্ছে আসতে চায় না। এছাড়া এই প্রক্রিয়ায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বে থাকবে, এটা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এত বিশৃঙ্খলা পৃথিবীর কোথাও নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একগুঁয়েমির কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না, এটাই প্রশ্ন।’

এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছর থেকে দেশের সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কাঠামো, জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিমালা তৈরি এবং পরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্কোর প্রদানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নতুন এই নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ‘ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)’ নামে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। 

জানা যায়, দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যে ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হয়েছে তাতে ভোগান্তি কমেনি। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আন্তরিকতার অভাব, ‘ইচ্ছাকৃত সংকট’ তৈরি করে রাখাসহ কয়েকটি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি সুস্থির ভর্তিব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না। এখন এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দীর্ঘ বছরের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় বড় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু একই গুচ্ছে থাকা ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে এখনো সংকটগুলো কাটেনি। ‘জটিলতার’ কারণে এখানে ভর্তির কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও রয়ে গেছে। এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ওই পরীক্ষার স্কোরের ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পরে একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সূচি প্রকাশ করা হবে। এরপর উচ্চশিক্ষার সব ক্ষেত্রে একই সময়ে ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। 

বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ডুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান। তার মতে, বিষয়টি বাস্তবায়নে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজি করাতে হবে। একটি অভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া আরও অনেক একাডেমিক বিষয় রয়েছে, সেগুলোতেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। 

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিল গত বছরের আগস্টে। কিন্তু ছয় মাস পর ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। গুচ্ছভুক্ত আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েও একই চিত্র। এ অবস্থায় গুচ্ছভুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির পরীক্ষা কবে হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে গুচ্ছের বাইরে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ওই বছরেই ক্লাস শুরু করে। তারা আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষেও ‘আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে’ আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত চলে আবেদন গ্রহণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হবে শিগগিরই।

শিক্ষাবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার বাস্তবতায় এটি কতখানি সম্ভব, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে সারা দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১৪টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮০টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস কোর্স। সবগুলোকে এক করা অনেক কঠিন কাজ।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //