ইবিতে অনার্সে ফেল করেও মাস্টার্স পাস, দুই সনদ বাতিল

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী অনার্সে ফেল করেও মাস্টার্সে পাস করার ঘটনা ঘটে। ঘটনার চার বছর পর মূল সনদ তুলতে গেলে স্নাতকে ফেল করার বিষয়টি জানতে পারেন শামীরুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

গত রবিবার (২৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে ওই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দীর্ঘসময় আলোচনা শেষে ওই শিক্ষার্থীর অনার্স ও মাস্টার্সের দুই সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীকে বিশেষ পদ্ধতিতে অনার্সের মানউন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় একাডেমিক কাউন্সিল। 

পরে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় বলে জানা গেছে। ফলে ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় অনার্সের পরীক্ষা দিতে হবে। রেজিস্ট্রার দপ্তর ও একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীরুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালে ওই শিক্ষার্থীর স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্নাতক শেষ বর্ষের ৪১৫ নম্বর কোর্সে ফেল করেন তিনি। তবুও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে কৃতকার্য হন। পরবর্তীতে দীর্ঘ চার বছর পর স্নাতক শেষ বর্ষের অকৃতকার্য বিষয়ে পরীক্ষার জন্য তিনি আবেদন করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ও আলোচনার সৃষ্টি করে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত গঠন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। একাডেমিক কাউন্সিলে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এসময় সভার কয়েকজন সদস্য এ ঘটনায় বিভাগ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের গাফিলতির বিষয় তুলে ধরেন।

শামীরুল ইসলাম বলেন, মূল কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি আমি জানতে পারি অনার্সে একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলাম। কিন্ত সেইসময়ে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এমনকি বিভাগ থেকেও অকৃতকার্য বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়নি। এর আগে আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সাময়িক সনদপত্র উত্তোলন করি। সেখানে আমাকে কৃতকার্যই দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকেছিল। আমি সব ডকুমেন্ট সেখানে উপস্থাপন করেছি।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল কালাম আজাদ বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলে ওই শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করে পুনরায় বিশেষ মান উন্নয়ন পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, আমি এখনো সিদ্ধান্তের চিঠি পাইনি, এজন্য মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। যতটুকু জেনেছি তদন্তে হয়তো বিভাগের নেগলিজেন্স পাওয়া যায়নি। এটা ওই শিক্ষার্থীর নেগলিজেন্স ছিল। তবে মাস্টার্সে ভর্তির সময় ভালোভাবে চেক করলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দেবে বিভাগ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তার দুই সনদ বাতিল করা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //