জবি ছাত্রী হলে সিট নবায়নের নামে অপ্রাসঙ্গিক ফি ধার্য করায় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক সিট নবায়ন ও অন্যান্য খাতে ফি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সিট নবায়ন করতে নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ফি, দরিদ্র তহবিল ছাড়াও বেশকিছু খাতে মোট ৩৫০০ টাকা ফি চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে।

তবে নোটিশে উল্লিখিত অধিকাংশ খাতের বাস্তবায়ন হয় না বলে দাবী করছেন হলের আবাসিক নারী শিক্ষার্থীরা। নোটিশে প্রকাশিত অধিকাংশ ফি-ই অপ্রাসঙ্গিক বলে অভিযোগ তাদের।

নতুন আবাসিক শিক্ষার্থী তুলতে ও সিট নবায়ন করতে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপীকা রানী সরকার স্বাক্ষরিত গত বুধবার (৭ জুন) এ সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, যে সকল শিক্ষার্থীদের আবাসিক সিট বরাদ্দের (০১) এক বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের সিট পুনরায় নবায়নের জন্য ৭ জুন হতে আগামী ২২ জুনের মধ্যে রকেট অথবা শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে তিন হাজার পাঁচশত (৩৫০০) টাকা পরিশেষে করে জমা রশিদের ০১ (এক) কপি হল অফিসে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা।

তবে নতুন করে যারা হলে সিট পাবে তাদের জামানত বাবদ (ফেরত যোগ্য) ৫০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে সিট নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে ১৬টি বিষয় উল্লেখ করে হলের নবায়ন ফি চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ তহবিল হিসেবে ২০০ টাকা, হল ক্রীড়া বাবদ (অভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, ধর্মীয় ফি বাবদ (অভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, হল পরিচয়পত্র নতুন/হারানো ফি বাবদ ১০০ টাকা, সাংস্কৃতিক ফি বাবদ (অভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, দরিদ্র তহবিল বাবদ ৫০ টাকা, হল লাইব্রেরি ফি বাবদ (অভ্যন্তরীণ) ৫০ টাকা, হল বিতর্ক ফি বাবদ (অভ্যন্তরীণ) ১০০ টাকা, সমাজসেবা ফি বাবদ ১০০ টাকা ছাড়াও হলের রিডিং রুমের ফি বাবদ ১০০ টাকা, উন্নয়ন খাত বাবদ ৩০০ টাকা, ইউটিলিটি বা বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩০০ টাকা এবং বিবিধ ফি ১০০ টাকা ধরা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবী নোটিশে প্রকাশিত খাত গুলোর অধিকাংশই গেলো এক বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ২-৩টি খাত ছাড়া বাকিগুলো অপ্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেছেন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন আমাদের কাছ থেকে অপ্রাসঙ্গিক কিছু খাত থেকেও টাকা নিচ্ছে। যার কোনোকিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বিতর্ক, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও আরও বেশকিছু খাতের জন্য যে টাকাগুলো নিচ্ছে সবগুলোই অহেতুক। শুধু রমজান মাসে একটা দিন ইফতার করানো হয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই দেখিনি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফি নেয়া হয়৷ কিন্তু হলে পানির ফিল্টার নষ্ট, বাথরুমের ছিটকিনি ভাঙা, বেসিন নষ্ট। এর আগে ছাত্রীদের কঠোর আন্দোলনের পর প্রশাসনের এত কম মাত্রায় ফি কমানো এবং অপ্রাসঙ্গিক খাতে টাকা নেওয়ার নোটিশ খুবই দৃষ্টিকটু। যা আবারও আমাদের আন্দোলনের সন্নিকটে নিয়ে যাচ্ছে।

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চাপিয়ে দেয়া এমন অতিরিক্ত ফি আমাদের জন্য অসম্ভব। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মাত্র ১ হাজার টাকা কমিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে।'

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপীকা রানী সরকার বলেন, 'হলের ফি আগে পাঁচ হাজার টাকার উপরে ছিল। সেখানে কমিয়ে তা ৩৫০০ টাকা করা হয়েছে। তারপরও আমি বলেছি যাদের কার্ড করা আছে তাদের ১০০ কম দিয়ে ৩৪০০ টাকা পেমেন্ট করতে। আর আগে কী কাজ হয়েছে না হয়েছে তা আমি দেখবো না। চলতি জুলাই থেকে আগামী জুন পর্যন্ত আমার কাজ। এর মধ্যে আমি শিক্ষার্থীদের ঘাটতি গুলো পূরণ করবো।

ফি পরিশোধের সময় কমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি তোমাদের সমস্যা হলে ঈদের পরে দিবে। আমার কাছে এপ্লিকেশন করলে তাদের সুবিধা মত সময় বাড়িয়ে দেয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //