জবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদুল আজহা

ঈদুল আজহা মুসলিম জাহানের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আত্মত্যাগের মহিমায় পরিশুদ্ধ হওয়ার উৎসবে আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমাগত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। উৎসর্গ, ত্যাগ, দান এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানো পবিত্র ঈদ সবার মাঝেই বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের জোয়ার। ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদকে ঘিরে বিরাজ করছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক শেখ শাহরিয়ার হোসেন।

মো. শিহাব উদ্দিন, শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

ঈদের মত রঙিন হোক সবার জীবন
দুই অক্ষরের ঈদ শব্দটির ব্যাপ্তি অনেক। ঈদ উৎসবের অন্যতম একটি বিষয় হলো- সম্প্রীতি, সৌহার্দ আর ঐক্যের মহামিলন। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবার জন্যই ঈদ। তাই প্রতিটি ঈদে আমার চাওয়া কোনো বিরোধ বা অপচর্চা নয়, চাই মানুষের মাঝে সম্প্রীতির মিলনমেলা, চাই প্রতিটি মানুষের জীবনে ঘটুক ঈদ আনন্দের প্রতিফলন। এবারে ক্যাম্পাসে আসার পর প্রথমবার ঈদুল আজহা উদযাপন করছি। সারাদিনই ব্যস্ত সময় পার করবো কোরবানির পশু নিয়ে। আর বিশেষ করে কোরবানির মাংস গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আনন্দ তো আছেই। বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ থাকবে ঈদের মতো খুশির দিনে এদের সাথে আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে নিবেন। এই মহিমান্বিত একমাসের পবিত্রতা যেন সারাবছর ধরে রাখতে পারি এবং সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে সেই প্রচেষ্টা থাকবে।

রওশন আরা অমি, ইতিহাস বিভাগ।

ঈদ হোক সৌহার্দ্য ও সম্প্রতির
কবে ঈদ আসবে, কবে বাড়ি ফিরবো এই ভাবনার মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে যায় ঈদ আনন্দ। ঈদে বাড়ি ফেরা যেনো যুদ্ধজয়ের মতো। টিকিটের জন্য সংগ্রাম, বাজারে ঈদের কেনাকাটার জন্য মানুষের ঢল, গরু-ছাগলের হাট এসব দেখেই বোঝা যায় ঈদ আসতে শুরু করেছে। ঈদের আগের দিন হাতে মেহেদি দেওয়া, ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়া, বিভিন্ন খাবার রান্না করা এবং পরিবারের সকলের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। ঈদ উপলক্ষে মানুষের হৃদয়ে গরীব দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি এবং তাদের সাহায্য করার যে মানসিকতা তৈরি হয় সেটির প্রভাব থাকুক বছরব্যাপী। সহমর্মিতা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ঈদ হয়ে উঠুক সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতির।

রিপন আল মামুন, মনোবিজ্ঞান বিভাগ।

কড়া নাড়ছে স্বর্গীয় আনন্দ 
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো ঈদুল আজহা। প্রতি বছরের ন্যায় সময়ের চাকার ঘূর্ণনে এবারো আরও একটি ঈদ চলে এসেছে আমাদের সামনে। শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটছে মানুষ প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। গ্রামের মায়া ছেড়ে যারা যানজটের শহরে থাকেন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ঈদ নিয়ে আসে এক অনাবিল আনন্দ। তাদের কাছে ঈদ মানে শিকড়ের টানে গ্রামে ছুটে চলা, ঈদ মানে প্রিয়জনদের মায়ার কাছে কয়েকটা দিন ডুবে থাকা। আর এমনি মায়ার কাছে হয়তে আমরা কেউ ইতিমধ্যে চলে এসেছি, কেউবা আসতেছি।

তাই এই ঈদযাত্রায় আমাদের সবারই একটু সচেতনতা অবশ্যই জরুরি। যে মানুষটা তার প্রিয়জনের সাথে ঈদ কাটানোর জন্য আসছেন এবং যিনি অপেক্ষা করছেন উভয়েরই আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে ঈদ যাত্রার একটু অসচেতনতাই। ঈদ মানে যেহেতু আনন্দ, তাই আমাদের চারপাশের অসহায়, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের দিকেও একটু লক্ষ্য রাখা উচিত যেন তারাও এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। আসন্ন ঈদের আনন্দ বার্তা বয়ে যাক সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে, নেমে আসুক স্বর্গীয় অনুভূতি মাখা কিছু মুহূর্ত।

ফারজানা শিলা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

ঈদ সবার জন্য হোক আনন্দময়
ঈদ মানে আনন্দের জোয়ার ঈদ মানে খুশি সঞ্চার এবং অপেক্ষার অবসান। কারণ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুটি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। আরবি জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ যে উৎসব পালন করা হয় তাকে ঈদুল আজহা বলে। 

এদিনে পশু কোরবানি করা হয়। ঈদ একটি আপেক্ষিক শব্দ যা ধনী-গরিব শিশুদের কাছে ঈদের অর্থ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। ধনীদের কাছে ঈদ মানে চাকচিক্য, জাঁকজমক, দামি পোশাক ইত্যাদি। গরিবদের কাছে চলমান অন্যান্য দিনের থেকে ভালো থাকা, ভালো খাবার খাওয়া, ভালো পোশাক পরা ইত্যাদি। আর শিশুদের কাছে ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে চাঁদ দেখা আর হাতে নকশা করে মেহেদী দেওয়া। কিন্তু সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে যে বিষয়টির মিল আছে তা হচ্ছে খুশির জোয়ার। ঈদ সালামি, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, বাইরে ঘুরতে যাওয়া সবকিছুই ঈদকে আরও স্মরণীয় করে তোলে।

জুনায়েদ মাসুদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট।

ঈদের আনন্দ যেন বেহাত না হয়
জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন সময়গুলো আরো আনন্দময় হয়ে উঠে যখন তা উপভোগ করা যায় আপন পরিবারের সাথে। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই বন্ধু, পরিবার-পরিজনের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর মূহূর্ত। কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই স্বপ্নের টানে শেকড় ছেড়ে ঢাকায় ছুটে আসা মানুষগুলো ইতিমধ্যে অনেকে বাসায় চলে গেছে আবার অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঈদকে ঘিরে প্রতি বছর এই সময়ে সড়ক, নদী ও রেলযাত্রা পথে থাকে উপচে পরা ভীড়। ফলে যাত্রাপথে আকস্মিক দূর্ঘটনা দেখা যায় অহরহ। আবার ঘটে মালামাল চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। ঈদের আনন্দ যেনো বেহাত না হয় সেজন্য যাত্রাপথে আমাদের খুব বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেনো আমরা কাঙ্ক্ষিত আনন্দটুকু পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারি সেই প্রত্যাশা। এই আনন্দ পৌঁছে যাক সমাজের অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কাছেও। তাদের মুখেও পৌঁছে যাক কুরবানির গোশতের স্বাদ। ঈদের আমেজটুকু যেন সর্বস্তরের মানুষের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারি সেটাই হোক আমদের প্রচেষ্টা, আমাদের ভূষণ।

মাহফুজা জান্নাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।

ঈদ হোক আনন্দ এবং সমতার
ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি হল ঈদুল আযহা। ঈদুল আজহা অর্থ ত্যাগের উৎসব অর্থাৎ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ত্যাগ করা। মহান আল্লাহ এই ঈদুল আজহাকে সেই সকল মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব বলেছেন যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ আছে। এ দিনটিতে মুসলমানরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, দুম্বা, গরু কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দিয়ে থাকেন। এরপর তা নিয়মানুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এই বিশেষ দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগির মধ্যে রয়েছে ইদ আনন্দের মূল অনুভূতি। একত্রে সকলে মিলে নামাজ আদায়, নামাজ শেষ একে অপরের সাথে কোলাকুলি, ঈদ সালামি আদান প্রদান, একত্রে মিষ্টান্ন গ্রহণ, এবং কোরবানির পশু জবাইয়ের মধ্যে দিয়ে তৈরী হয় এক আমেজ মুখর পরিবেশ। এই আনন্দ খুশি আমাদের মধ্যে তৈরি করে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক।

তবে আমাদের চারপাশে এমন অনেকে রয়েছে যারা এই আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ পান না। আমাদের সকল সামর্থ্যবান মুসলমান ব্যক্তির দায়িত্ব অপর একজন মুসলমান ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো। ঈদ আনন্দ সকলের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং আত্মীয়-স্বজন পরিবার-পরিজন,গরিব মিসকিন ও প্রতিবেশীর প্রতি  যথার্থ হক পালন করা। তবেই ঈদের আসল মহিমাত্ব প্রকাশ পাবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হবে।

সাকিব রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

ঈদুল আজহার ত্যাগ ও মহিমা ছড়িয়ে যাক 
ঈদ মানে আনন্দ আর ফুল ঝরা খুশির অনুভূতি। তারপর এটি যদি হয় ঈদুল-আজহা তাহলে তো কথাই নেই হয়ে যাবো এক দিনের কসাই।এ যেন বাধভাঙা আনন্দ উল্লাস। নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পরতে যাবো এটা ভাবলেই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। যেন স্বর্গসুখ এখানেই নিহিত। নামাজ শেষে আপ্লুত হৃদয়ে কোলাকুলি করা সব কিছুতেই যেন আনন্দের ছোঁয়া। ছোট, বড় সকলেই যেন আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় একে অপরের মাঝে। সারাদিন টো টো করে ঘুরা ফেরা করা সিনিয়রদের কাছ থেকে সালামি নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করা সত্যিই আনন্দের। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ক্লাস করে, পরীক্ষা দিয়ে হাঁপিয়ে ওঠার পর। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মুসলিম জাহানের প্রধান দুইটি উৎসবের মধ্যে একটি হলো ঈদুল আযহা। ঈদ পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব সকলের মাঝে এক মিলবন্ধন নিয়ে আসে। কিন্তু পথশিশু এবং হতদরিদ্র মানুষের ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। তাই সমাজে এসব মানুষদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এ এইচ মাইনউদ্দীন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।

ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের চেতনা জাগ্রত করা
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে হাসিখুশি। প্রতিবছর ঈদুল আজহা আমাদের নিকট ত্যাগের বাণী নিয়ে হাজির হয়। ঈদুল আজহা আমাদের শিক্ষা দেয়-নআমাদের নামাজ-রোযা কোরবানি জীবন-মরণ সব কিছু একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত করতে। ঈদুল আজহার অন্যতম উপলক্ষ হচ্ছে কোরবানি। আর্থিক এবং মানসিক ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহ নিকর্টবর্তী হওয়ার মাধ্যম কোরবানি। মনের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি-সমাজ সকলের কল্যাণে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে কোরবানি। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরী করা। কোরবানির ঈদ শুধু গোশত খাওয়ার অনুষ্ঠানে নয়, বরং নিজেদের মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করে। কোরবানির পশুর গোশত দরিদ্রদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বন্টনের মাধ্যমে ঈদুল আজহা সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ আদায়ে সচেষ্ট করে তুলে। পাশাপাশি পাড়াপড়শি সকলে মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয় কোরবানির ঈদে। ঈদুল আজহা আমাদের জাতীয় জীবনে ত্যাগের মহিমা জাগ্রত করে এবং ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে শেখায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //