‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত নয় বুয়েটের আটক শিক্ষার্থীরা’

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে আটক হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাদের অভিভাবকরা।

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বুয়েট শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করেন আটককৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা জানান, হাওরে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ তাদের আটক করেছে বলে জানায়। তারা এও বলেছে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; এরপর আইডি কার্ডের নম্বর নেওয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে পারে। কিন্তু এরবেশি কথা বলতে দেওয়া হয়নি কাউকে। পরে ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর থেকে আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানরা রাষ্ট্রীয় কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। তারা কোনো রাজনীতির সাথেও জড়িত নয়। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে সে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দ্রুত তাদের মুক্তি চাই।

অভিভাবকদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটক শিক্ষার্থী আলি আম্মার মুয়াজের ভাই আলি আহসান জুনায়েদ।

তিনি বলেন, গত শনিবার (২৯ জুলাই) সন্তান-স্বজনেরা আমাদের জ্ঞাতসারে ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। সেখানে বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয়। সবাই একত্রে ঘোরার কথা জানায়। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, হাওর এলাকায় হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যা। এজন্য ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। একই দিন রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নম্বর জানাতে বলে।

তিনি আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসি স্যারের দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সাথে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মহোদয় আমাদের জানান যে, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকেল ৪টা বা ৫টার দিকে। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।

শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ। এই বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে বলা হয়েছে- ঘটনাস্থল থেকে আটককৃত ব্যক্তিদের তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইলফোন, ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্কিনশটের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য, সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত স্কিনশটের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এসব মালামাল জব্দের বিষয়টি বানোয়াট দাবি করে আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। আর টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যেয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর। পরবর্তীতে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, তাদের কাছে এবং সাথে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছুই না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে মামলা সাজানোর জন্য।

উল্লেখ্য, হাওরে ঘুরে বেড়ানোর সময় বুয়েটের বর্তমান ও প্রাক্তন ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //