চারদিন ধরে ২৪টি
লেগুনা আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
(জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার (২৫
জুলাই) থেকে শুক্রবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে
সারিবদ্ধভাবে এসব লেগুনা আটকে রাখা হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব প্রমুখের নির্দেশে এসব লেগুনা আটকে রাখা হয় বলে জানা যায়। তবে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) মোটা অংকের এককালীন এবং মাসিক চাঁদার চুক্তি শেষে লেগুনাগুলো ছেড়ে দেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলের শিক্ষার্থীর মোটরবাইকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ এনে ২৫ জুলাই বিকালে মীর মশাররফ হোসেন হল গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে শাখা ছাত্রলীগের
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে
চলে যান এবং মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে লেগুনা ছাড়বেন বলে জানান।
রাতে লেগুনা মালিক
সমিতির নেতারা আসলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ১২টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়।
সেগুলো ২৫ ও ২৬ জুলাই সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ছিলো। এরপর বুধবার (২৬ জুলাই) বিকালে আরও ১২টি লেগুনা আটকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত মোট ২৪ টি লেগুনা হলের পাশেই রাখা হয়।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতারা
সাংবাদিকদের জানান, হলের দুই শিক্ষার্থীর বাইকে ধাক্কা দেওয়ায় এসব লেগুনা আটকানো
হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোতে অনেকে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। তাই তাদের মালিক পক্ষের
সাথে আলোচনা না করে লেগুনাগুলো ছাড়বেন না।
তবে লেগুনার চালক ও মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা নিয়মিত চলাচল করে। প্রত্যেক চালককে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসেবে মাসিক দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতো তারা। তবে বিগত দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিলো। তার প্রেক্ষিতে আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। তবে এবার চাঁদার পরিমাণ চারগুণ বাড়িয়ে লেগুনা প্রতি ১০০ টাকার হিসাবে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন ছাত্রলীগের নেতারা। তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে চারদিন লেগুনাগুলো ছাড়েনি নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
লেগুনা মালিক সমিতির একাংশের এক নেতা বলেন, জাবি ছাত্রলীগকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা
দিতাম। এখন তারা ১০০ টাকা করে দাবি করছে। আমাদের আরও অনেক জায়গায় চাঁদা দেওয়া লাগে।
এত টাকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
এ ব্যাপারে জানতে
মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেনিন
মাহবুব এবং দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।
তবে সেসময় চাঁদাবাজির
বিষয় অস্বীকার করে দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি লেগুনা হলের দুই ছোট ভাইয়ের
বাইকে ধাক্কা দিয়েছে। তাই তাকে এখানে থামতে বলি। সে আমাদের একটা নকল চাবি দিয়ে পালিয়ে
যায়। তাই বাকিদেরকে আটকানো হয়েছে। এসব গাড়ির অধিকাংশের ফিটনেস নেই। এমনকি চালকদেরও
কোন লাইসেন্স নেই। তাই মালিকদের সাথে কথা বলে ছাড়বো বলেছি।
এদিকে লেগুনা আটকে
রেখে মালিকপক্ষের কাছে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে
দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে শাখা ছাত্রলীগের ১নং সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল
ইসলাম সাজ্জাদের কাছে চাঁদার টাকা নিয়ে আসেন লেগুনা মালিক মিন্টু গাজী ও ফজা। এসময়
তাদের সাথে আরো এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন সাজ্জাদ।
এসময় মিন্টু গাজী সাজ্জাদের হাতে তিন বান্ডিল টাকা তুলে দেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা
যায়, তিন বান্ডিলে মোট ১ লাখ ২০ টাকা সাজ্জাদের হাতে তুলে দেন তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার
করে সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, এটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ঘটনা। পূর্বের ঘটনাকে
ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমার এক আত্মীয়ের বালির ব্যবসার বাবদ মিন্টু গাজী তখন
এক লাখ টাকা আমার কাছে দিয়ে যান। লেগুনা বাবদ তার সাথে আমার কোন কথা হয়নি। বিগত এক
মাসের হলের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেও বোঝা যাবে, এই সময়ে সে হলে আসেনি।
এ ব্যাপারে শাখা
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে আমি অবগত
নয়। এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি। তবে জাবি শাখা ছাত্রলীগের কেউ যদি এমন
অসাংগঠনিক কাজে জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান-কে
একাধিকবার ফোন করলেও তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh