জাবিতে নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদ ধস, শ্রমিক আহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম বরকত হল ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন মসজিদের ঢালাইয়ে ছাদ ধসে পড়েছে। কাজের প্রতি উদাসীনতা, গাফিলতি ও নির্মাণ ত্রুটির ফলে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদ ঢালাই শুরু হলে ২০ মিনিটের মধ্যেই ছাদের পশ্চিম ও দক্ষিণ কিনারার সাটারিং ধসে পরে এতে একজন শ্রমিক আহত হয়।

সরেজমিনে গিয়ে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, ছাদ ঢালাই শুরু করার পূর্বে প্রায় ২০ দিন আগে সাটারিং করে রাখলেও কাজের গাফিলতি ও বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে যথাসময়ে ঢালাই করা হয়নি। এতদিন পর ঢালাই শুরু করতে গেলে বৃষ্টির পানিতে সেন্টারিং দুর্বল হয়ে পড়ায় ছাদ ধসে পড়েছে। কাজের ধীরগতির ফলে এরকমটা হয়ে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীবৃন্দ। এই মসজিদ নির্মাণকাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। কাজের গাফিলতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছরেও মসজিদটি পূর্ণাঙ্গ দাড়াতে পারেনি। কিন্তু এ নিয়ে কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ও প্রশাসন দুষছেন একে অপরকে। 

ঢালাইরত অবস্থায় ছাদ ধসে পরার কারণ জানতে ঠিকাদার ফর্মিলা কনস্ট্রাকশন এর ঠিকাদার দাইয়ান বলেন, সাটারিং করার পর আমরা ছাদ ঢালাই এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে আমরা ঢালাই শুরু করতে পারছিলামনা। কারণ বৃষ্টিতে ঢালাই করা উচিত না। আজকে বৃষ্টি নেই দেখে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখন ভাইব্রেটর দ্বারা পরীক্ষা করছিলাম, যার ফলে আমরা ছাদের একপাশ থেকে কাজ শুরু করি। কিন্তু এতদিন বৃষ্টির যে প্রভাব তাতে তারকাটা স্লিপ করে যায় এবং ঢালাই ধসে পরে।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, ছাদ ধ্বসে যাওয়ার পর আমরা সরেজমিনে এসে দেখেছি। এখন এই অবস্থায় ঢালাই এর কাজ চালানো সম্ভব নয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢালাই যেটুকু হয়েছে তা ওয়াশ আউট করতে। পুরোটা ধুয়ে ফেলার পর আমরা আবার এসে পর্যবেক্ষণ করবো। পরবর্তীতে কিভাবে কাজ আগাবে সেবিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা জানাবো।

এসময় আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা আকস্মিক এই ঘটনায় বিস্মিত। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরকে আপাতত ঢালাই অংশ ওয়াশ আউট করতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা এর দায়িত্বে থাক প্রকৌশলী জানাবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরেজমিনে গিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এসময় তিনি বলেন, ছাদ ধসে পরেছে এই প্রেক্ষিতে আমি এসে পর্যবেক্ষণ করি ও সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দিই। তবে আরেকটি বিষয় বলতে চাই, যেহেতু এখানে সার্বক্ষণিক লোকজন থাকে সেক্ষেত্রে এর কাজ হওয়া প্রয়োজন ছিলো সবচেয়ে বেশি। তা না হয়ে কাজের প্রতি অবহেলার জন্যেই এরকম দুর্ঘটনা ঘটলো যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এসব বিষয়ে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা মসজিদ ভিত্তিক কমিটি নির্ধারণ করবে কবে নাগাদ এর কাজ শুরু হবে।  

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার পর ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে নতুন করে নির্মাণের উদ্দেশ্যে মসজিদটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। কিন্তু মসজিদের ধারণ ক্ষমতা কর্তৃপক্ষ থেকে ৭৫০ জন বলা হলেও নকশায় মসজিদের ধারণক্ষমতা ৫৩৪ জন জানতে পেরে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সংশোধিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরিবর্ধিত নকশায় নির্মাণ খরচ বৃদ্ধির কারণে মসজিদ নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে কাজ শুরু হলেও কচ্ছপ গতি যেন পিছু ছাড়ছে না এই কাজের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //