খাদিজার মুক্তির দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা দুই মামলায় এক বছর ধরে কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড় ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহীদ মিনার, বটতলা থেকে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

এসময় মিছিল থেকে সংস্কার নয় বাতিল চাই, সিএসএ বাতিল চাই; খাদিজা জেলে কেনো, শেখ হাসিনা জবাব দে; লেখক মোশতাক মরলো কেনো, শেখ হাসিনা জবাব চাই; মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খাদিজার মুক্তি চাই ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী দে বলেন, আমরা স্বাধীনদেশের নাগরিক হলেও আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। আপনারা জানেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী  খাদিজার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। শুধু উপস্থাপক হওয়ার অপরাধে আজ ৩৬৫ দিন ধরে জেলে থাকতে হচ্ছে। খাদিজা যে প্রশ্নগুলো করেছিল তা যৌক্তিক। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সে প্রশ্নগুলো করতে পারে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিশ্চুপ এই বিষয়ে। খাদিজার বোনকে অপমান করা হয়েছে যখন সে প্রক্টরের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিল। যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় পা চাটা কুকুর হয়ে যায় তখন সেখানে কিভাবে মানব সম্পদ উৎপন্ন হবে সেখান থেকে কিভাবে আমরা সচেতন নাগরিক পাব। খাদিজার মামলার জামিন ছয়মাস স্থগিত রাখা হয়েছে। একটি বিশ বছরের মেয়েকে রাষ্ট্রের কিসের এত ভয়। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই অবিলম্বে খাদিজাকে মুক্তি দিতে হবে। খাদিজাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে হবে।

জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান বলেন, একটি আইন যখন তৈরি হয় তা সাধারণ জনগণের সুবিধার জন্য। একটি আইন যখন সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই আইনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। খুনের আসামিরাও জামিন পায়, একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে কিসের এত ভয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ক্ষমতাসীনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে খাদিজার মুক্তি চাই।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম বিভাগের শিক্ষার্থী ঋদ্ধ্য অনিন্দ গাঙ্গুলি বলেন, যে দেশকে বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবি করে সে দেশে এ ধরনের আইন থাকতে পারে না। গণতন্ত্র যে দেশে নাই তা এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দেখলেই বোঝা যায়। দেশের প্রতিটি শ্রেণিপেশার মানুষ এই সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছ। আমরা যদি দেশকে বাঁচাতে চাই তাহলে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে। গদি টলমল করলেই কেবল একটি শাসক এই ধরনের আচরণ করে। কোন স্বৈরশাসক আজীবন টিকে থাকতে পারে না। আমরা বলতে চাই আইয়ুব গেছ যেই পথে হাসিনা যাবে সেই পথে। আমরা হুশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই মানুষকে খেপাবেন না। মানুষকে খেপানোর পরিণাম ভালো হয় না। অবিলম্বে খাদিজাকে মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। 

উল্লেখ্য অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ। 

২০২২ সালের  ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তখন থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //